ঢাকা, বুধবার ১ মে ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১
দিগন্তজোড়া কেবলই হলুদের মাঠ

সরিষাবাড়ীতে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ

কামরুল হাসান, সরিষাবাড়ী: | প্রকাশের সময় : বুধবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০০:০০ অপরাহ্ন | কৃষি ও প্রকৃতি

প্রাচীনকাল থেকেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ তথা জামালপুরের সরিষাবাড়ী এলাকার লোকজনের মুখে মুখে একটি প্রবাদ চালু আছে- ‘সরিষা, পাট আর গরুর গাড়ি, এ তিনে মিলে সরিষাবাড়ী।’ বিশেষ করে বয়স্ক লোকদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন, এখনও তাদের মুখে এ প্রবাদটি হরহামেশাই আওড়াতে শুনা যায়। তারাও নিঃসন্দেহে বলবেন- নানা-নানী ও দাদা-দাদী বা তাদের সমবয়সীদের মুখেও শুনে আসছেন। যা হোক- দেশের প্রধান নদী যমুনা ও তার শাখা ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাই এবং সুবর্ণখালী, বলেশ্বর, বংশাইসহ নানা উপ-শাখা নদী অববাহিকায় এ অঞ্চলটি অবস্থিত। সঙ্গত কারনেই পলল গঠিত মাটির ফলে প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চল তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের অধীন জামালপুর জেলাসহ সরিষাবাড়ী উপজেলা পাট ও সরিষা আবাদের জন্য বিখ্যাত। তখনকার দিনে এ এলাকার রাস্তা-ঘাট এখনকার মত এতটা উন্নত ছিল না। তাই এ জনপদের লোকজনের যাতায়াত, কৃষি পণ্য ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা ছিল গরুর গাড়ি। আর সরিষা ভাঙ্গিয়ে তেল সংগ্রহের জন্য সরিষাবাড়ীর উপকণ্ঠে অর্থাৎ কামরাবাদে একটি বেপারী পাড়াই গড়ে ওঠেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঘানির মাধ্যমে গরু, মহিষ ও মনুষ্য দ্বারা বিশেষ কায়দায় সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করে আসছে। বর্তমানের এ যুগে বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে যান্ত্রিক উপায়ে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে ঘানির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবুও সৌখিনতা ও শারিরীক প্রয়োজনেই এর ব্যবহার টিকিয়ে রেখেছেন কেউ কেউ। এখন তারা ঘোড়াতে ঘানি টেনে চাহিদা মাফিক তেল উৎপাদন করছেন ও সরবরাহ করছেন। 

অতি সম্প্রতি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে জানা যায়, চলতি সরিষা মৌসুমে সরিষাবাড়ী উপজেলায় বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে। বিনা-৯, বিনা সরিষা-১১, বিনা সরিষা-১৪, বিনা সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-১৮ ও তরি-১৭ জাতের সরিষা রয়েছে। সূত্র জানায়, এ উপজেলায় এ মৌসুমে সর্বমোট ৫ হাজার ৩শ’৬০ হেক্টও জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, এ মৌসুমের আবাদকৃত সরিষার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে- ৭ হাজার ৫শ’৯৩ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য, সরিষার মৌসুমে অনেক মৌচাষী বা খামারি সারি সারি বাক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করছেন। এতে দেশের অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে আরেক নতুন মাত্রা।

প্রতি বছরই সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারে সরিষার আবাদ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের চেয়ে এখন সরিষা আবাদের দিকে কৃষকেরা ঝুঁকছেও বেশি। ফলে সরিষার উৎপাদনও দিন দিন বাড়ছে। 

 

লেখক- সাংবাদিক ও ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাব, ঢাকা (সাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মকর্তা)।