সিলেটের ১৩ টি উপজেলার মধ্যে ৭ টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হলো জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের অন্য উপজেলাগুলোর নি¤œাঞ্চলেও পানি প্রবেশ করছে। একইভাবে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে সুরমা ন দীর পানি প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে, শুক্রবার (৩১ মে) সকাল ৬টায় সিলেটের কানাইঘাট সুরমা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ২০৯ সেন্টিমিটার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য দুটি পয়েন্ট গোয়াইনঘাটের জাফলং ডাউকি পয়েন্ট ও সারি গোয়াইন পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ২১৩ সেন্টিমিটার এবং শেওলা পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, সারি গোয়াইন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে, জেলায় ৫৪৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতটি উপজেলার ৩৪৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে বন্যা কবলিত এলাকার ৪ হাজার ৮০২ জন লোক আশ্রয় নিয়েছে।
প্লাবিত উপজেলাগুলোর মধ্যে কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল, শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিলেট জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দুর্গত মানুষের খোঁজ নিতে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান উপজেলাগুলোতে পরিদর্শন করেছেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি উপজেলার মানুষের জন্য ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকা ছাড়াও আশপাশের উপজেলাগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বন্যার্তদের স্বাস্থ্য সেবার প্রদানের জন্য ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, বন্যা কবলিত উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল-রুম খোলা হয়েছে। বন্যা-কবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রæততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।
সিলেট নগরীতে প্রবেশ করছে পানি
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাডড়ি ঢলে সিলেটের সীমান্তবর্তী ৭ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার পর এবার সুরমা নদীর পানি ছড়াগুলো উপচে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) মধ্যরাত থেকে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে পানি ঢুকতে শুরু করে।শুক্রবার সিলেট নগরীর জামতলা, তালতলাস্থ সিলেটের ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় ও তোপখানা, সোবহানীঘাটসহ বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে দেখা যায়।
সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, উজানের পানি নেমে আসায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে ছড়ার পানি নদীতে যাওয়ার কথা সেখানে নদীর পানি ছড়া উপচে নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
সাদাপাথরে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
উজান থেকে নেমে আসা সিলেটে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে পাঁচ উপজেলা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষ। পানি বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথরসহ জেলার অনেক পর্যটন কেন্দ্র। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ সাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়- অবিরাম বর্ষণ ও ঢলে ধলাই নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি হওয়ায় ও পর্যটনকেন্দ্রসমূহ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রসহ সকল পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হলো।