![](https://dainikbayanno.com/storage/untitled-6-26.jpg)
বিজয় দিবস উপলক্ষে সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিতর্কিত অতিথি নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরীকে এই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত এই সভায় তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলামের পাশে মঞ্চে বসে থাকতে দেখা যায়।
অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী স্থানীয় রাজনীতিতে এক বিতর্কিত চরিত্র। তিনি ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলির নির্দেশদাতা হিসেবে পরিচিত কুখ্যাত চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজীর পক্ষে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া, আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর আইনি প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি তিনি সীতাকুণ্ড আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।
বিজয় দিবসের মতো একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে অতিথি করা, এবং তাকে মঞ্চে বসিয়ে সম্মানিত করার ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানান সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম। বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার সঙ্গে ফখরুদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ইউসুফ নিজামী এ প্রসঙ্গে বলেন, “ফখরুদ্দিন চৌধুরী আমাদের বহু নেতাকর্মীর জামিনে বাধা দিয়েছেন। তার কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা কারাগারে অমানবিক সময় কাটিয়েছে। জাতীয় অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানিত করা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সীতাকুণ্ড উপজেলা সভাপতি আবু বক্কর চৌধুরী বলেন, “ফখরুদ্দিন চৌধুরী মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। তার অতীত কর্মকাণ্ড বিজয় দিবসের মঞ্চে তাকে উপস্থিত করার সঙ্গে মানানসই নয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, ফখরুদ্দিন চৌধুরী দম্ভভরে মঞ্চে বসে ইউএনও এবং পুলিশের ওসির সঙ্গে হাসিমুখে আলাপ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি বক্তব্যও প্রদান করেন।
উত্তর জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, “আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতাদের সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো উচিত নয়। তাদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।”
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফখরুদ্দিন চৌধুরী। ভারতে বসে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় বলে জানা যায়।
জাতীয় দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অতিথি নির্বাচন নিয়ে সীতাকুণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভবিষ্যতে জাতীয় দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অতিথি নির্বাচন আরও সঠিকভাবে পরিচালিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় জনগণের।
বায়ান্ন/এসএ/পিএইচ