চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমুল বস্তিবাসী সমন্বয় সংগ্রাম পরিষদ নামে অনিবন্ধিত সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের ছিন্নমুল এলাকা নামে জঙ্গল সলিমপুরের বিশাল জায়গা দখলে নিয়ে গড়ে উঠেছে ছিন্নমুল বস্তিবাসী। বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ এখানে বসবাস করে। এই এলাকার মানুষ এখনো হতে পারেনি সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজী ও শোষণ মুক্ত। জানা যায়, আক্কাসের যুগ থেকে সরকারী প্লট ও পাহাড় বেচা কিনা করে বানিজ্য করেছে কোটি কোটি টাকা। তার মৃত্যুর পর মশিউরের উত্থান হয়। শুরু হয় গ্রুপিং। কয়েক গ্রুপে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী ও মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। এসব গ্রুপিং নিয়ে হামলা মামলাও কম হয়নি। মশিউরের গ্রুপের দখল বানিজ্য ও মামলা প্রশাসনের নজরে আসলে দীর্ঘদিন ধরে জেলের ঘানি টানছেন ছিন্নমুলের আরেক ত্রাস খ্যাত মশিউর রহমান। সে জেলে ঢুকে গেলে খুশি হয় তার এন্ট্রি গ্রুপ। মশিউরের গ্রুপ ও এন্ট্রি গ্রুপ মিলে দুর্দান্ত প্রতাপে এখনো প্রায় লক্ষাধিক ছিন্নমুলবাসীকে শাষন করছে। মশিউরের আমল থেকে গাজী সাদেক সভাপতি ও মশিউর সাধারণ সম্পাদকের এই প্যানেল খাস জমির প্লট বিক্রি, বিদ্যুৎ দিয়ে বানিজ্য, এলাকার ্উন্নয়নের নামে মানুষ থেকে কোটি কোটি টাকা বানিজ্য করেছিল। এ ছাড়া ছিন্নমুলের জায়গা সরকার থেকে বন্দোবস্তির নামে প্রতিটি সদস্য থেকে তিন দফায় টাকা নিয়ে একটি পক্ষ রাঘববোয়াল হয়ে গেছে। কিন্তু বন্দোবস্তির এখনো দেখা পায়নি এই এলাকার জনগণ। যারা এখন বসবাস করছে তারা এখন অনেকটা যাযাবরের মতো বসবাস করছে।
জানা যায়, একদিকে সরকারী চাপ, অন্যদিকে এসব দুবৃত্তদের চালচাতুরীতে তাদেরকে দেখার কেউ নেই। এলাকার বাসিন্দারা এসব দুর্বত্তদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে কথা বললে তার নামে ফিটিং মামলা দিয়ে দেয়। এই ছিন্নমুল এলাকার মানুষ নদী ভাঙ্গা বা অর্থহীন নিম্ন আয়ের মানুষ। এই চক্রের কবলে পড়ে নিজের একটি বাড়ির লোভে তাদের কাছ থেকে পাহাড়ি প্লট কিনেছে, কেউবা পাহাড় কেটে প্লট করেছে। এক একটা প্লটে পঞ্চাশ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েও জমা শ্লিপে উঠেছে মাত্র ষাট টাকা। এখন সেই প্লট মালিকরা দিশেহারা হয়ে কি করবে বুঝতে পারছেনা। তারা সরকারের কাছ পর্যন্ত যেতে পারছেনা , এই সুযোগে একটি চক্র সরকারী খাস জায়গা তাদের নামে বন্দোবস্তির কথা বলে দফায় দফায় টাকা নিচ্ছে। এই টাকার কোন গতি দেখছে না নিম্ন আয়ের এই মানুষ গুলো। শুধু তাই নয়, এই ছিন্নমুল গরিব মানুষগুলোর সরলতাকে পূজী করে বিভিন্ন ভাবে শোষণ করছে বলে জানা যায। এই চক্রটি এখনো ছিন্নমুল এলাকায় দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচার আচারের নামে কাজী অফিসে বসে বাদী বিবাদী উভয় পক্ষ থেকে ২হাজার টাকা করে মোট ৪হাজার টাকা নিয়ে পরে প্রহসন বিচারের মাধ্যমে পক্ষপাতিত্ব ব্যাক্তি থেকে আলাদা সুযোগ আদায় করছে। তারা এখনো বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’জানা যায়, গত ৭ই মার্চ ২০২৪ইং তারিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বরাবর একটি আবেদন করেন এই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। সেই আবেদনে তুলে ধরেন ছিন্নমুল নাম দিয়ে এলাকা গড়ে উঠলেও কেউ সুখে নেই এই এলাকার মানুষ। চক্রটি একসময় তারা গ্রুপিং করলেও বর্তমানে প্রশাসনের নজড়দারী পড়ায় সকল গ্রুপ একসাথে হয়ে কাজ করছে। অনেকে আবার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিভিন্ন পদপদবী নিয়ে নিজেদের জাহির করছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। এই এলাকার একজন বলেন, এই এলাকায় সভাপতি গাজী সাদেক, সাবেক মেম্বার গোলাম গফুর এখন মশিউরের পরিবর্তে সাধারণ সম্পাদক, নুরু ডাকাত, ৬নং সমাজের আল আমিন সাগর , ৩নং সমাজের মির মোহাম্মদ আরমান, ৪নং সমাজের মিজানুল কদর, ৪নং সমাজের মোস্তফা করিম কাউছার, ১নং সমাজের সিরাজ প্রকাশ বোমা সিরাজ, ৩নং সমাজের আমিন প্রকাশ এলজি আমিন, ২নং সমাজের রফিক ডাকাত, ১ নং সমাজের শিবলু, ৭নং সমাজের কানা সেলিম, ৩নং সমাজের আরিফ, ৩নং সমাজের রানা হায়দার, ২নং সমাজের সাগর, ইসলামপুরের ছাইদ এখনো সক্রিয় অবস্থানে আছে। তারা এখনো মানুষকে স্থায়ী বন্দোবস্তির লোভের ফাদে দৌড় খেলছে। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বিদ্যুত সংযোগ থেকে বিশ থেকে বাইশ হাজার করে নিয়ে সংগঠনের একটি ৭হাজার টাকার স্লিপ ধরিয়ে দিয়েছে। ইউনিট প্রতি ছয় টাকা পচিশ পয়শা সরকারী বিলের পরিবর্তে তারা বিদ্যুত অফিসের প্রতি মাসে চৌদ্দ থেকে ষোল টাকা করে অতিরিক্ত টাকা নেয়। গ্রাম সিএনজির ষ্ট্যান্ড থেকে জাহাঙ্গীর চাদা নেয় গাড়ি প্রতি দৈনিক একশ টাকা। এখানে প্রায় একশ বিশটার উপরে গাড়ি আছে। যা থেকে দৈনিক একটি বিশাল অংকের টাকা উত্তোলিত হয়। নতুন ট্র্যাক্সি ছিন্নমুলে নামলে গাড়ি প্রতি দশ হাজার টাকা এককালীন নেয়া হয়। এই টাকা সিন্ডিকেট ভাগ করে নেয়। এখনো এলাকার কেউ প্লট ছেড়ে চলে গেলে তাদের প্লট বেচা কেনা করে একটি সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। এই এলাকার লক্ষাধিক মানুষ কোন উপায়ান্তর না পেয়ে বারবার তাদেরই দারস্ত হয়। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা এই এলাকার সাধারণ জনগণ খাটিয়ে যেমন রাজনৈতিক ফায়দা নেয় তেমনি এই এলাকার নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষের রক্তরস চুষে নেয়। এসব সন্ত্রাসী প্রত্যেকের বাইরে জায়গা জমি প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। প্রতিবেদককে তারা আরো বলেন, এখানের টাকা নিয়ে গাজী সাদেক, মশিউর, গোলাম গফুর, আলআমিন সাগর, মোস্তফা করিম কায়ছার ও আশিকুর রহমান, মিজানুল কদর বাইরে মালিকানা জায়গা কিনে কয়েকটি বাড়ির মালিক হয়েছে। একসময় তাদের কিছুই ছিলনা, এখন তারা প্রতিজন চট্টগ্রাম শহরে বাড়ির মালিক। তাদের এইসব দুর্নীতি কর্মকান্ডে সরকারীভাবে কোন চাপ আসলে বা এই এলাকায় কোন সমস্যা হলে কয়েকদিন ছিন্নমুল এলাকায় বাইরে থাকে। তারপর আবার সুযোগ বুঝে এলাকায় প্রবেশ করে তাদের রাজত্ব কায়েম করে। জানা যায়, এই এলাকায় অনেক ধনী ও শিক্ষিত লোকও বসবাস করে। কিন্তু তারা মুখ খুলতে পারেনা গায়েবী মামলার ভয়ে। এখানে কেউ একটু মাথা তুলে কথা বললে তার বংশ ধ্বংশ করার জন্য এই চক্রটি উঠে পড়ে লাগে। তারা গায়েবী মামলা তৈরী করে তাকে ফাসানোর চেষ্টা করে। এলাকা ছাড়া করে। এই সুযোগে তার প্লট ও বাড়ি দখল করে নেয় । এ যেন এক রাম রাজত্ব। এলাকার কয়েকজন প্রতিবাদী লোক প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আমরা এমন ভাবে সয়ে গেছি, তাদের শত অত্যাচারও এখন সহা হয়ে গেছে। ছিন্নমুল বাসীর প্রতি প্রশাসন সঠিক ভাবে নজড় না দিলে এই এলাকার প্রতিটি মানুষ দিনের পর দিন হয়রানি ও নিরাপত্তাহীন হয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের বাইরে গিয়ে কেউ থানায় কোন মামলা বা কোর্টে গিয়ে মামলা মোকাদ্দমা করতে পারেনা। করলে পরের দিন নিজেদের গায়েব হওয়ার ভয়ে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বসবাসকারী বলেন, বর্তমানে প্রতিটি শাখা কমিটি অনুমোদন করার নামে দুই হাজার টাকা করে দিতে হবে। ১০৪টা শাখা কমিটি প্রায় দুই লক্ষ আট হাজার টাকা তোলবে। ১নং সমাজের বার্মা সাইম, জাহেদুল ইসলাম রাজু ও কাউছার এলাকাকে মাদক বেচা কেনা আখড়া হিসাবে গড়ে তুলছে। এতে আমাদের যুব সমাজ ও ছাত্রছাত্রিদের নিয়ে বেশি শংকিত। তাদের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত। শুধু তাই নয়, আমরা ঘর দরজা মেরামতের জন্য একটা ইটের গাড়ি আনতে পারিনা। এর জন্য তাদেরকে ১হাজার ইটে ১ হাজার টাকা দিতে হয়। তাহলে ইটের গাড়ি ছিন্নমুলে প্রবেশের পারমিট মিলে। এইসব নিয়ে কোন প্রতিবাদ করা যায়না। আরেকজন বলেন, ইমরান মোল্লিকের ছত্রছায়ায় তৈরী হচ্ছে কিশোর গ্যাং। যারা এই এলাকার জন্য অনেক ভয়ংকর। তাদের ভয়ে আমাদের ছেলে পেলেদের নিয়ে অনেক টেনশানে থাকতে হয়। আরেক সদস্য বলেন, মশিউরের আমলে বন্দোবস্তির কথা বলে এই সিন্ডিকেট একবার টাকা নিয়েছে, পরবর্তীতে গোলাম গফুরের আমলেও ২বার নিয়েছে। এখনো জায়গা বন্দোবস্তির কোন খবর নেই।
ছিন্নমুলের সভাপতি গাজী সাদেক বলেন, বন্দোবস্তীর নামে একবার টাকা তোলা হয়েছিল, তাও মশিউর থাকতে। এরপর আর তোলা হয়নি। এখন জায়গা বেচা কেনা বন্ধ।
সাধারন সম্পাদক ও সাবেক মেম্বার গোলাম গফুরের মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি।