ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সুনশান নিরবতা মেয়র জাহাঙ্গীরের বাড়ি

মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান, গাজীপুর : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ২৩ নভেম্বর ২০২১ ১১:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

মাত্র কয়দিন আগেও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়িটির নিচতলায় ভিড় লেগে থাকত মানুষের। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়তেন কে কার আগে দেখা করবেন মেয়রের সাথে। বর্তমানে সেই বাড়িতে শুধুই সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুর মহানগরীর ছয়দানা এলাকায় সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নিজ বাড়িটি শত শত দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকের পদচারণায় সরগরম থাকত সবসময়। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর পাল্টে গেছে বাড়িটির দৃশ্যপট।

সরেজমিনে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিন থেকে চারজন নিরাপত্তাকর্মী বাড়ির নিচে প্রবেশদ্বারে বসে আছেন। কিছু উৎসুক মানুষ বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করছে। প্রবেশদ্বারে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে দড়ি, যাতে কোনো গাড়ি বা মানুষ ভেতরে ঢুকতে না পারে।

শুক্রবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পর শনিবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। 

পর দিন রোববার নগর ভবন কার্যালয়ে যাননি মেয়র। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অল্পসংখ্যক লোক থাকলেও তাদের সঙ্গেও মেয়র দেখা করেননি।

স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কারের পর মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। রাতারাতি বদলে গেছে অনেক নেতাকর্মী। প্রায় কোণঠাসা ও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন দাপুটে মেয়র জাহাঙ্গীর। 

 

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে রাজনৈতিকভাবে অনেক ঘনিষ্ঠজনও দূরে সরে গেছেন। অনেকে আবার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। অন্যদিকে মেয়রপন্থি অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন কিছুটা বিপাকে। আর জাহাঙ্গীরের বিরোধী অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে দেখা গেছে উচ্ছ্বাস।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২০১৬ সালে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৫-২০ জন ছিলেন মেয়রের আস্থাভাজন। 

পরে ৫৭টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে জাহাঙ্গীর তার অনুসারীদের প্রাধান্য দেন। এ ছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আজমত উল্লা খানের সঙ্গে বাহ্যিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন জাহাঙ্গীর। 

কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে ভেতরে ভেতরে দূরত্ব বাড়তে থাকে। স্থানীয় এমপিসহ মহানগরের সব উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও ছিল দূরত্ব।

উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে গোপনে ধারণ করা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কথপোকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধ ও গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।

তারা মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। এ ঘটনায় গাজীপুরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। 

এ নিয়ে গাজীপুরে মেয়র-সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গত ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে এর জবাব দিতে বলে। তিনি জবাবও দেন।

পরে ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক বৈঠকের সিদ্ধান্তে গাজীপুর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।