প্রথমে স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা টিপে ধরেন বাবু। তাদের ধস্তাধস্তি দেখে ছোট মেয়ে চিৎকার শুরু করলে তার গলায় গামছা পেঁচান। এক পর্যায়ে তিনজনের গলায় গামছা পেঁচিয়েই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তিনি। পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বাবু।
স্ত্রী ও দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা মশিউর রহমান বিশ্বাসের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাবু। নিহতদের নাম সাবিনা ইয়াসমিন বীথি, সুমাইয়া খাতুন (৯), ও সাফিয়া খাতুন (২)।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু তার জবানবন্দি গ্রহণ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, শনিবার (১৬ জুলাই) বাবুকে আদালতে তোলার আগে শুক্রবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাতে নিহত বীথির বাবা শেখ মুজিবর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন তার বিরুদ্ধে।
যা জানালেন বাবু
জবানবন্দিতে বাবু বলেছেন তিনি পেশায় একজন রড মিস্ত্রী। মাদক সেবন করেন প্রতিদিন। অভয়নগরের সিদ্দিপাশা গ্রামের শেখ মুজিবর রহমানের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথীকে বিয়ের পর থেকেই তাদের পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ চলছিল। আড়াই মাস আগে বিথী তার দুই মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে মাঝে মধ্যে শ্বশুর বাড়ি যেতে হতো তাকে। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি চলছিল।
শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ির আসছিলেন বাবু। পথে স্ত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে বিথী ও সুমাইয়ার গলা চেপে ধরেন তিনি। এ সময় ছোট মেয়ে সাফিয়ার গলায় গামছা পেঁচান। এক পর্যায়ে তিনজনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাদের হত্যা করেন।
যা আছে অভিযোগে
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে আসছিলেন বাবু। চাপাতলা গ্রামে আব্দুস সবুরের বাড়ির পিছনে কলাবাগান ও ঘাসের জমিতে নিয়ে স্ত্রী বিথী ও বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং শেষে ছোট মেয়ে সাফিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মরদেহ তিনটি সেখানে ফেলে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনকে ঘটনাটি জানান বাবু। এ সময় তার বড় ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গেলে বাবু পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এ ঘটনায় নিহত বিথীর বাবা শেখ মুজিবর রহমান বাদী হয়ে অভয়নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
বিথীর বাবার অভিযোগ
পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে তার মেয়ের বিয়ে হওয়ার পর থেকেই বাবু তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা নিতেন। এর মধ্যেই তাদের দুটি সন্তান হয়। টাকা না দিলে মেয়ে ও নাতিনদের নির্যাতন করতেন মুজিবরের জামাই। ২০২১ সালের ২২ জুন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয় বাবুকে। এরপর আরও টাকা চাইলে বিথী তার দুই মেয়েকে নিয়ে তাদের বাড়ি চলে আসেন।
মুজিবর রহমান বলেন, শুক্রবার জামাই বাবু আমার বাড়িতে আসে। আমার মেয়ে ও দুই নাতিনকে সঙ্গে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। পরে জানতে পারলাম অভয়নগরের প্রেমবাগ ইউনিয়নের চাঁপাতলা গ্রামে নূর ইসলামের কলাবাগানের মধ্যে আমার মেয়ে ও দুই নাতিনকে হত্যা করেছে সে।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে মা-মেয়েসহ তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলায় বীথির বাবার বাড়ি সিদ্দিকপাশাতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন, আসামি বাবু যশোর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন।