অতীতে মায়েদের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ বলা হতো প্রসবকালীন সময়টাকে। যার জন্য দায়ী করা হয় অজ্ঞতা, অদক্ষ ধাত্রী ও ধর্মান্ধতাকে। তবে সময়ের সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। বদলেছে মানুষের ধারণা। ফলে স্বাভবিক প্রসবে ঝুঁকছেন পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের নারীরা।
বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জিয়াউল হায়দার জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রসূতির সার্বিক সহযোগিতা ও সেবা দিতে বদ্ধ পরিকর হাসপাতাল। গর্ভকালীন চারবার চেকাপ, নরমাল ডেলিভারি, ডেলিভারি পরবর্তী সুবিধা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, পরামর্শসহ সব সেবা দেওয়া হয়। গর্ভকালীন শিশুর বেশি ওজন ও প্রসবকালীন জটিল পরিস্থিতি না থাকলে প্রসূতিদের কখনোই সিজারে সুপারিশ করা হয় না।
২০২০ থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালে মাতৃকালীনসেবা গ্রহণ করেন এক হাজার ১৩২ জন। ২০২১ সালে এ সেব গ্রহণ করেন এক হাজার ৮১৮ জন। ২০২০ সালে সর্বমোট ৩৭০টি ডেলিভারির মধ্যে নরমাল হয়েছে ২৩০। ২০২১ সালে ৩৯৮টি ডেলিভারির মধ্যে নরমাল হয়েছে ৩১৭টি।
আরও জানা যায়, ২০২০ সালে সিজারিয়ান ডেলিভারি ৮০টির মধ্যে মৃত শিশুর সংখ্যা ২৮। ২০২১ সালে ৪২ সিজারিয়ান ডেলিভারির মধ্যে মৃত শিশুর সংখ্যা ১৮।
উপপরিচালক ও সিভিল সার্জন ইনসিটু অং সুই প্রু জানান, নরমাল ডেলিভারিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। চাইলেও সহসা সিজার করা হয় না। সিজারই সব কিছু নয়। নরমাল ডেলিভারি মা ও শিশু উভয়ের জন্যই মঙ্গল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী সিজারিয়ান ডেলিভারির সংখ্যা কোনোভাবেই অর্ধেকের বেশি হতে পারবে না। সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা ও ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত’র বিশেষ বিবেচনায় জেলার সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপদ মাতৃকালীন চিকিৎসাসেবা, নরমাল ডেলিভারি করানো, শিশু চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
এছাড়া আগামী দশকের মধ্যে নরমাল ডেলিভারির বিপরীতে সিজারিয়ানের সংখ্যা শতকরা ১০ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রায় কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান সিভিল সার্জন।