দেশে প্রতি বছর পানিতে ডুবে মারা যায় ১৪ হাজারেরও অধিক মানুষ। যার মধ্যে মৃতের ৮৩ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। পানিতে ডুবে মৃত্যু রোধে সরকারি উদ্যোগ না থাকা এবং সচেতনতার অভাইে ‘নিরব মহামারি’ হিসেবে রূপ নিয়েছে এটি। ‘পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বিষয়ক প্রশিক্ষণ’ কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
শনিবার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ২৫ জন সাংবাদিকদের নিয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই)সহযোগিতায় কর্মশালার আয়োজন করে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’। দুইদিন ব্যাপী আয়োজিত কর্মশালার শনিবার ছিল প্রথম দিন।
কর্মশালায় জানানো হয়- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের (আইএইচএমই) ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল বারডেন অব ভিজিজ স্টাডি শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে ১৪ হাজার ২৯ জন মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এ রিপাের্ট অনুযায়ী পানিতে ডুবে মৃত্যুর দিক থেকে কমনওয়েলথ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।
‘সমষ্টি’ জানায়- সংবাদপত্রে প্রকাশিত মোট ঘটনা ও মৃত্যু জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ের অনলাইন নিউজ পোর্টালে গত দুই বছরে (২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত) পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে ১ হাজার ৪২৬টি ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় সারাদেশে ১ হাজার ৭৯৯ শিশুসহ মোট ২ হাজার ১৫৫ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়।
কোথায় কত মৃত প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৯৭ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ৪৩৮ জন, রাজশাহীতে ২৭০, রংপুরে ২৫২, ময়মনসিংহে ২৩০, বরিশালে ১৮৬, খুলনা বিভাগে ১৫৮ জন ও সিলেট বিভাগে ১২৪ জন মারা যায়।
গণমাধ্যম প্রতিবেদন অনুসারে নেত্রকোনা জেলায় গত ২৪ মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায় ৯১ জন। পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুড়িগ্রাম জেলা। এসব জেলায় যথাক্রমে ৮১, ৭৩ ও ৬৯ জন মারা যায়।
পানিতে ডুবে মৃতদের ৮৩ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। চার বছর বা কম বয়সী ৮৫৭ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৬৫৫ জন, ১০-১৪ বছরের ২১২ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৭৩ জন। ৩৫৮ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়- ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ৬০ শতাংশ সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টার মধ্যেই ঘটে থাকে। এই সময় পরিবারের সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে এই দূর্ঘটনাটি বেশি ঘটে। তবে এর জন্য অসচেতনতাই সবচেয়ে বেশি দায়ি।
কর্মশালার প্রথম দিনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের সামনে সমগ্রীক চিত্র এবং গণমাধ্যমের নানান দিক তুলে ধরেন চ্যানেল আই’র সিনিয়র নিউজ এডিটর ও সমষ্টি’র ডাইরেক্টর মীর মনছুর জামান, সমষ্টির রিচার্জ এন্ড কমিউনিকেশনের ডাইরেক্টর মো. রেজুয়ানুল হক ও জিএইচএআই’র কমিউনিকেশন ম্যানেজার সারোয়ার-ই আলম।