করোনা সংক্রমণে সরকারের দেওয়া বিধি-নিষেধের মধ্যেই দীর্ঘ ৭ বছর পরে চলতি মাসের ১৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। আর এই সম্মেলন ঘিরে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। এবারের সম্মেলনে দলের সভাপতি ও সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।
ঢাকা-পাবনা দৌড়ঝাঁপ, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বোঝাপড়া, নানা রঙের ব্যানার, পোস্টারে ভরপুর পাবনা শহর জুড়ে। চারিদিকে নানাগুঞ্জন আর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। কে হতে যাচ্ছে আগামী দিনের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারন সম্পাদক।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, পাবনা ঐতিহাসিক পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে (পুলিশ লাইনস মাঠে) সম্মেলনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকাল ১১ টায় পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লালের সভাপতিত্বে সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থাকবে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল রহমান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। আর প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্তিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও বেশ কিছু নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এবারের সন্মেলনে সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি (সিনিয়র সহ-সভাপতি) ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পাবনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আজিজুল হক আরজু, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস, পাবনা জেলা কৃষক লীগের সভাপতি তৌফিকুর রহমান তৌফিক, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য, পাবনা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাদিরা আক্তার জলি।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বিলায়েত আলী বিল্লু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মাজাহারুল ইসলাম মানিক,পাবনা পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবি লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুল আলীম।
জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, সম্মেলন সফল করতে প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। শান্তিপুর্ণ ভাবে সম্মেলন সফল করতে নেতাকর্মিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। সম্মেলনে তিনি আবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবে এমন দাবী জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ ৬ বছরে জেলার আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোন্দল, আধিপত্য, মনোমালিন্য, তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে নেতাকর্মি ও সমর্থকদের সুসংগঠিত করতে আমার সাধ্যমতো এবং দলের নীতিনির্ধারণীদের সাথে নিয়ে কাজ করেছি। সেই দৃষ্টিকোন থেকে আমি দাবী রাখতে পারি কাউন্সিলররা আমাকে আবার তাদের সুচিন্তিত মতামত দিয়ে দলের জন্য কাজ করতে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত করবেন। তিনি আরও বলেন, আমার দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর। তারা অবশ্যই ভালো কাজের মূল্যায়ন করবেন।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, পাবনা জেলায় দলীয় ভাবে কোন কোন্দল, বিশৃংখলা বা গ্রুপিং নেই। আমরা জেলা আওয়ামীলীগ এক ও অভিন্ন। সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী একটি সুসংগঠিত সংগঠন। আমি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমার কর্মকান্ড এবং সাংগঠনিক যোগ্যতায় অবশ্যই আমি সভাপতি পদটি পাবো এ বিশ^াস রাখি দলীয় প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর। তিনি আরো বলেন বিধি-নিষেধের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা সম্মেলন করছি। লোক সমাগম কম করা হবে। সবাইকে মাস্ক পরে সমাবেশস্থলে আসার জন্য বলা হয়েছে। কোনো সমস্যা হবে না।
এবারের সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রাার্থী তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল ইসলাম মানিক বলেন, এই জেলার সন্তান আমি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি করে আসছি। আমার জেলাতে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিচর্চা নেই বলেলই চলে। ক্ষমতাকে আগলে রাখার রাজনীতি চলছে এখানে। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীরা ভালো ফলাফল করতে পারেনি। আর এর অন্যতম কারণ দায়িত্বে থাকা অভিভাবকেরা সঠিক প্রার্থী ও তাদের সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা তরুণ নের্তৃত্ব প্রত্যাশা করছেন।
তিনি আরো বলেন, ক্ষমতাকে আগলে না রেখে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। হাউব্রিডদের কারণে আজ দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অনেকাংশে উপেক্ষিত। তাই আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিতের জন্য এবারের সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মেলনের বিষয়ে পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, দেশের কল্যাণে মানুষের প্রয়োজনে রাজনীতি করছি আমরা। করোনা মহামারি এই সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষদের রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে। দেশের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। সব নেতাকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মেলনে অসার জন্য বলা হয়েছে। দলের নীতি নির্ধারকেরা দলের প্রয়োজনে এই তারিখ ও সময় নির্ধারণ করেছেন। আশা করছি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্মেলনে আসবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের ১৩ মাস পরে ৯৩ সদস্য বিশিষ্ঠ জেলা কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর মধ্যে ২৫ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে। জনসংখ্যার বিবেচনায় এবারের জেলা কমিটির অকৃতি বাড়ানোসহ দলের সংগঠকদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠন করা হবে বলে প্রত্যাশা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।