ঢাকা, বুধবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১৫ই মাঘ ১৪৩১

৮১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ: তারিক সিদ্দিকসহ ১৯ জনের নামে চার মামলা

বায়ান্ন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ ০৬:৩৪:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

বিমানবন্দরে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। 

মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান।

মোট ১৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগাযোগ, নেভিগেশন ও নজরদারি ব্যবস্থাপনা, রাডার স্থাপন প্রকল্পের আওতায় রাডার নির্মাণের সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় দুদক আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। একই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় পৃথক আরেকটি মামলা।

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ২১২ কোটি টাকা এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও রানওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।

চার মামলায় তারিক সিদ্দিক ছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মহিবুল হক ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান মহিবুলকে আসামি করা হয়। এছাড়া মামলায় অন্যান্য আসামিদের মধ্যে আছেন বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম-সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও এবং বেবিচকের সাবেক সুপারিন্টেনডেন্ট প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরও মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের হেভিওয়েট নেতাদের মতো তারিক সিদ্দিকও পালিয়ে গেছেন তিনি কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ১৬ বছরে নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে।

কার্যত আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই অভিযোগগুলো আলোয় আসে। এর আগে যেসব অভিযোগ উঠেছিল, সেগুলো কখনও সরকারের কাছে গুরুত্ব পায়নি বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারিকের বিরুদ্ধে পিলখানায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা, শাপলা চত্তরে রাতের আধারে হেফাজতের নেতাকর্মী ও মাদরাসার ছাত্রদের হত্যা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শত শত ছাত্র ও পরবর্তীতে জনতা এ আন্দোলনে যুক্ত হলে তাদের ওপর দমন পীড়নের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ অপরাধে তার স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকিও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা শেখ হাসিনার অত্যান্ত আস্থাভাজন ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ লুটপাট ও সেনাবাহিনীর অনেক পেশাদার কর্মকর্তাকে হয়রানি করে চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন তথ্য বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোয়েন্দাদের তদন্তে।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাবেক ক্যাপ্টেন (অব.) ড. খান সুবায়েল বিন রফিক বলেছেন, পুরো ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন তারিক আহমেদ সিদ্দিক। কিছু সামরিক, বেসামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

অপহরণ, গুম ও হত্যার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনার অভিযোগে মামলাও হয়েছে তারেক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। এ মামলার আসামি মোট ১০ জন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বেশ কয়েকটি মামলার আসামি হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক।

তারিক সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের ছোট ভাই। তিনি এক সময় শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাপ্রধান ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরও একই পদে বহাল থাকেন তিনি। ২০২৪ সালেল জানুয়ারিতে তাকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন শেখ হাসিনা।

সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

বায়ান্ন/একে