ট্রাকচালক বিল্লাল হোসেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রাক চালান। আপ-ডাউনে পারিশ্রমিক পেতেন চার হাজার টাকা। তবে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর তিনি আর ভাড়া নিয়ে যাননি। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে অলস সময় পার করছেন।
বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ডিজেলের দাম বাড়তি। খ্যাপ মেরে পোষায় না। বরং খ্যাপ মারলে আরও ক্ষতি হবে। তাই ট্রাক বন্ধ করে বসে আছি। লোকসান দিয়ে তো ট্রাক চালানো যাবে না। মালিকও মানবেন না, আমারও খরচ পোষাবে না।’
রোববার (৭ আগস্ট) তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, শুধু বিল্লাল নন, শত শত চালক পণ্য পরিবহনের চাকা বন্ধ করে অলস সময় পার করছেন। অথচ একসঙ্গে এত চালকের অলস সময় পার করার কথা নয়।
কথা হয় আরেক ট্রাকচালক আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভাই ডিজেলের দাম না বাড়লে আপনি এখন আমাকে পেতেন না। আজ খ্যাপ নিয়ে রংপুর যাওয়ার কথা। কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ভাড়া বাতিল করে বসে আছি।’
এই ট্রাকস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি ও পিকআপ পার্কিং করা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ৭৫ শতাংশ পরিবহনই বন্ধ। শুধু যেসব পোশাকমালিকের ট্রাক আছে, সেসব ট্রাকই পণ্য পরিবহন করছে।
তারা জানান, আগে ঢাকা-চট্টগ্রামে ১০ টন পণ্য পরিবহন করতে একটি ট্রাকে ১৮ হাজার টাকার জ্বালানি খরচ বা ডিজেল দরকার হতো। বর্তমানে খরচ হচ্ছে ২৪ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অন্যান্য রুটেও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে যাতায়াত খরচ বেশি পড়ছে। কিন্তু সেই বাড়তি ভাড়া তারা পাচ্ছেন না। ফলে অধিকাংশ পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
এ অবস্থায় পণ্য পরিবহন সচল রাখতে ডিজেলে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৭১২টি ট্র্যাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ ভ্যানসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন রয়েছে। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে বছরে ডিজেলের চাহিদা ৪৬ লাখ মেট্রিক টন। বৈশ্বিক বাজারে বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের মূল্য ১৪১ ডলার। প্রতি ডলার ৯০ টাকা ধরে এক ব্যারেলের দাম পড়ে ১২ হাজার ৬৯০ টাকা। এক ব্যারেলে ডিজেল থাকে ১৫৯ লিটার। ফলে এক লিটারের দাম পড়ে প্রায় ৮০ টাকা।
অন্যদিকে ১০টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেলের চাহিদা ২ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। বাকি ডিজেল পণ্য পরিবহন ও কৃষিখাতে ব্যবহার করা হয়। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে দেশে প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ গত শুক্রবার (৫ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টার পর ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন ও অকটেনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে ডিজেলে এক ধাক্কায় লিটারে ৩৪ টাকা বেড়েছে।