ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ভোটের রোডম্যাপে ব্যস্ত ইসি

আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট

বায়ান্ন ডেস্ক: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৩ জুলাই ২০২৩ ০৭:১৪:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

 

আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়ে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে জানুয়ারির শুরুতে ভোট করতে চলতি বছরের নভেম্বরেই সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে।

 

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দুই ধরনের পরিকল্পনা থাকবে ইসির। প্রথমত, নভেম্বরের মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে আগামী বছরের (২০২৪ সালের) জানুয়ারিতে ভোট গ্রহণ। দ্বিতীয়ত, নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ভোট অনুষ্ঠান।

 

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইভিএম ছাড়া ব্যালট পেপারে ৩০০ আসনে ভোট করতে রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন কার্যক্রম চলতি মাসের মধ্যে শেষ হবে। নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চলছে ভোট কেন্দ্র নির্ধারণের কার্যক্রম। এ জন্য একটি নীতিমালাও করা হচ্ছে।  সেই নীতিমালার আলোকে মাঠ কর্মকর্তারা কাজ করছেন। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ ক্ষেত্রে এমপি প্রার্থীদের সশরীরে রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচন অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে না। শুধু অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেই চলবে। মনোনয়নপত্রের হার্ডকপি রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে না। প্রার্থী যে কোনো স্থানে থেকেই অনলাইনে সম্পূর্ণ মনোনয়নপত্র দাখিল ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। সংসদ নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচন নিরুত্তাপভাবে শেষ হলেও কোনো গোলযোগ না হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান  বলেন, নির্বাচনী রোডম্যাপ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশন যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে সব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাররা ভোট দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারেন, তা নিশ্চিতকল্পে জোর প্রচেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে সংলাপে যোগ না দেওয়া দলের প্রতিনিধিদের অনানুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময়ের জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। কমিশন আন্তরিকভাবে চায় একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং আশাবাদী, আগামী নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে। তিনি বলেন, ভয়ভীতিহীন, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন সর্বোচ্চ তৎপর। এ ছাড়া সদ্য সমাপ্ত পাঁচ সিটি নির্বাচনসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ৮০০ নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সুসম্পন্ন হয়েছে এবং জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় আগামীতেও সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করব ইনশাআল্লাহ। পাশাপাশি সবার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতাও একান্তভাবে কামনা করি। আশা করি বর্তমান ইসি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হবে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। রোডম্যাপে সংসদ নির্বাচনের ১৪টি চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়। আর চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায় নির্ধারণ করা হয় ১৯টি। সেই অনুযায়ী সব কাজ করছে কমিশন। তবে ইতোমধ্যে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তাই ব্যালট পেপারে ভোটের জন্য কাগজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহের কাজ চলছে।  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে নির্বাচনী সংলাপ শেষ করেছে; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ; ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শেষ হয়েছে; নতুন দল নিবন্ধনের প্রাথমিক তালিকা হয়েছে, চলছে পর্যবেক্ষণ; ভোট কেন্দ্র নির্ধারণের কাজ চলছে আগস্টের মধ্যে শেষ হবে; তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট প্রকাশ করবে কমিশন। নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে, আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা কথা রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চলছে কেনাকাটা : সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিলের (কেপিএম) কাছে প্রায় ৭০০ টন কাগজ চেয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছাপানোর জন্য তিন রঙের কাগজ প্রয়োজন হয়। সাধারণত হলুদ, নীল ও গোলাপি রঙের কাগজ দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে ইসির চাহিদা অনুযায়ী রঙিন কাগজ সরবরাহ করবে কর্ণফুলী পেপার মিল। অন্যদিকে নির্বাচনের ব্যালট পেপারের কাগজ কেনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটার কার্যক্রমও চলছে। নির্বাচনী মালামালের মধ্যে- ব্যালট পেপারের কাগজ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, আম কাঠের প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি রয়েছে। ইসির এক কর্মকর্তা বলেছেন, নির্বাচনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হচ্ছে- অমোচনীয় কালির কলম, ব্যালট বাক্সের সিল, স্ট্যাম্প প্যাড, রেড সিলিং ওয়াক্স, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল ও ব্রাশ সিল। চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব উপকরণ ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ব্যবহার করা হবে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরই অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্ট্যাম্প প্যাড কেনা হবে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ, রেড সিলিং ওয়াক্স প্রায় ১৮ হাজার কিলোগ্রাম, অফিশিয়াল সিল প্রায় ৬ লাখ, মার্কিং সিল প্রায় ১২ লাখ, ব্রাশ সিল কেনা হবে ১ লাখের বেশি। আর অমোচনীয় কালির কলম প্রায় ৭ লাখ এবং প্রায় ৩৫ লাখ ব্যালট বাক্সের সিল কিনবে কমিশন।