সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রওয়ানা হবেন। রাত ৯টায় তার বিমানবন্দরে পৌঁছার কথা। কাতারের আমীরের পাঠানো বিশেষ বিমানটি রাত ১০টায় হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে আকাশে উড়বে। স্পেশাল এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিরতি শেষে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করবে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় বিমানটি যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। লন্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সেখানে তিনি ভিআইপি প্রটোকল পাবেন। পৌঁছার পর পরই ব্রিটেনের খ্যাতনামা হাসপাতাল লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হবেন বেগম খালেদা জিয়া।
৭ বছর পর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সবশেষ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তিনি বিদেশ সফর করেছিলেন।
খালেদা জিয়ার সফর সম্পর্কে সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, এই মুহূর্তে যে সকল ফর্মালিটিজ আছে, সেগুলো সম্পন্ন করে আগামীকাল রাত ১০টায় ইনশাল্লাহ কাতারের আমিরের স্পেশাল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ম্যাডাম ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দোহা হয়ে লন্ডনের হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
তিনি বলেন, ‘লন্ডন ক্লিনিক বলে একটা পুরনো ঐতিহ্যবাহী হসপিটাল আছে। সেই হসপিটালে এটি এনএইচএস-এর অধীন একটি হসপিটাল। সেখানে উনাকে (খালেদা জিয়া) ভর্তি করা হবে। হিথরো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে উনাকে সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। এই হসপিটালে উনি চিকিৎসাধীন থাকবেন।’
খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের বিষয়ে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জানি না, আমাদের জার্নিটা কেমন হবে। আমাদের এমনও হয়েছিল যে, আমরা ডেট করে ফেলেছিলাম, কিন্তু সেই ডেট ডিফার করতে হয়েছে ডিউ টু হার হেলথ কন্ডিশন। কাজেই মঙ্গলবার ১০টা পর্যন্ত হোয়াট উইল হ্যাপেন উই ডোন্ট নো। আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে, উই আর হেন্ডলিং আ পেশেন্ট, যার মাল্টিপল ডিজিজ আছে। সেজন্য আমরা লন্ডন ক্লিনিকে- যেটি মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি এডভান্স সেন্টার সেখানে- নিয়ে যাচ্ছি। সেখানকার চিকিৎসকরা উনাকে দেখে তারপরে ডিসিশন হবে উনার নেক্সক্ট কোর্স অব ডিসিশন কী হবে?’
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘যদি আমাদের ওখানে (লন্ডন ক্লিনিক) সুপারিশ করে যে, ইয়েস শি নিডস; তাদের এখানে নাই, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপিটালে নিয়ে যেতে হবে, তখন হয়ত যাওয়ার একটা প্রশ্ন আসে।’
চেয়ারপারসন পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সুস্থ থাকলেই ফেরার সময়ে বা কোনো এক সময়ে... মানুষ চাইলে কিন্তু ওমরাহ করা যায় না, আল্লাহর চাইতে হয়। কাজে রাব্বুল আ’লামীন যদি (ইনশাল্লাহ) কবুল করেন, ডেফিনেটলি ম্যাডাম সেটা করবেন। এটা কিন্তু প্রিডিসাইডেড না যে, এটা করবেনই।’
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার খবর জেনে রাজকীয় বহরের একটি বিশেষ বিমান দিয়েছেন। এ কথা জানিয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের কাতারের চারজন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্য এই বিমানে যাবেন। এরা হলেন, অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন।
এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন।
দেশবাসীর কাছে দলীয় চেয়ারপারসনের জন্য দোয়া চেয়ে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, যারা ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বিভিন্নভাবে প্রার্থনা করেছেন। তাদের সবার কাছে দলের পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। ম্যাডাম এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ম্যাডামের চিকিৎসাটা যাতে ভালো হয়, উনি যেন সুস্থ হয়ে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আবার আমাদের মাঝে ফেরত আসতে পারেন সেজন্য দলের পক্ষ থেকে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটি সবাই আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ম্যাডামের পরিবারও ম্যাডামের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থ্যতার নানা দিক তুলে ধরে তার ব্যক্তিগত চিকিৎক বলেন, ম্যাডামের নানা শারীরিক জটিলতা রয়েছে যা আমরা বিভিন্ন সময়ে বলেছি। সর্বোপরি উনার লিভারের জটিলতাটা অর্থাৎ লিভার সিরোসিস রয়েছে।
তিনি বলেন, হার্টে উনার ব্লক ছিলো একাধিক। খালি লাইফ-সেভিং পোরশন যেটুকু, সেইটুকু করা হয়েছিলো ওই সময়ে। কারণ ওই সময়ে উনার শারীরিক সুস্থতা ওইরকম ছিলো না। উনার আরও যে ব্লক আছে সেটা অ্যাড্রেস করার দরকার আছে, উনার ক্রনিক কিডনি ডিজিজ যেটা আছে, সেটাও অ্যাড্রেস করতে হবে। উনার করোনা পরবর্তীতে কিছু জটিলতা হয়েছে। সেগুলো নিরসন করার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা ওভার-অল থরো চেকিংয়ের জন্য যেটা আমাদের দেশে হয়েছে... আমাদের দেশের ফিজিশিয়ানরা, এভারকেয়ার হসপিটালের স্টাফ, তারা বেস্ট। এই ব্যাপারে আমাদের ম্যাডামের পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে, পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ডিসসেটিসফেকশন নাই। সবাই হ্যাপি, উই আর হ্যাপি অলসো, দল হ্যাপি। কাজেই আরো কিছু উন্নত করার জন্য সেখানে আরও থরো চেকিং হবে।’
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, তার লিভার ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়টি সিদ্ধান্ত হবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ইউনিটে যাওয়ার পরে। ওখানে ওই সুবিধাটা আছে ‘সো দে উইল ডিসাইড যে, হোয়াট উইল বি দ্যা নেক্সক্ট কোর্স অব ট্রিটমন্ট।’
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ ও কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন।
বায়ান্ন/এসবি