ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

উদযাপন হবে জাতীয় সংসদের ৫০ বছরপূর্তি, আসবেন বিদেশি অতিথিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ অগাস্ট ২০২২ ০৮:৩৩:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

 

আগামী বছরের এপ্রিলে পূর্ণ হবে জাতীয় সংসদের পথচলার ৫০ বছর। এ উপলক্ষে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সঙ্গে যৌথভাবে বছরব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। তবে এপ্রিল মাসে রমজান হওয়ায় পরের মাস থেকে শুরু হবে উদযাপন। অনুষ্ঠানে সিপিএভুক্ত পার্লামেন্টগুলোর স্পিকার ও সংসদ সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী লন্ডন সফরে গিয়ে সিপিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল স্টিফেন টুইগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। স্টিফেন টুইগ পঞ্চাশ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে সিপিএ’র সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

সংসদের লাইব্রেরিতে থাকা নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাধীন বাংলাদেশের গণ-পরিষদের প্রথম অধিবেশন ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকার তেজগাঁও সংসদ ভবনে শুরু হয়। গণ-পরিষদের প্রথম স্পিকার নির্বাচিত হন শাহ আব্দুল হামিদ এবং ডেপুটি স্পিকার মুহম্মদুল্লাহ। স্পিকার শাহ আব্দুল হামিদ মৃত্যুবরণ করায় ডেপুটি স্পিকার মুহম্মদুল্লাহ পরবর্তী সময়ে স্পিকার এবং মো. বয়তুল্লাহ ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে রোববার (২১ আগস্ট) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে তার কার্যালয়ে বলেন, আগামী বছরের এপ্রিল মাসে সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। কিন্তু সে মাসে রমজান থাকবে। তাই পরবর্তী মাস থেকে আমরা ৫০ বছর উদযাপন শুরু করবো। এটি বছরব্যাপী করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সংসদের যুগ্ম-সচিব এম এ কামাল বিল্লাহ বলেন, সম্প্রতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী লন্ডন সফরকালে সিপিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল স্টিফেন টুইগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। স্টিফেন টুইগ এসময় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের পঞ্চাশ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে সিপিএ’র সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, এর আগে বাংলাদেশ পার্লামেন্টের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে স্পিকার লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ভবনে হাউস অব কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলে কে আমন্ত্রণ জানান। স্পিকার লিন্ডসে হোয়েলে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

জাতীয় সংসদের ইতিহাস ও যত নির্বাচন

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জাতীয় সংসদে ১৫টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১৫। এই সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ঢাকার তেজগাঁও জাতীয় সংসদ ভবনে, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল।

১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ১৫টি থেকে ৩০টিতে উন্নীত করা হয়। এতে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩০। ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়।

১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংরক্ষিত ৩০টি নারী আসনসহ সংসদের সদস্য সংখ্যা ছিল মোট ৩৩০। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১০ জুলাই।

চতুর্থ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন হয় ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। ২৫ এপ্রিল সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এ সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০। সংরক্ষিত ৩০টি নারী আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কোনো সংরক্ষিত নারী সদস্য ছিলেন না।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ৫ এপ্রিল প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এ সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৩০ জন। কারণ নারীদের জন্য ৩০টি সংরক্ষিত আসন সংক্রান্ত আইন হওয়ায় পঞ্চম জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পুনরায় ৩০ জন নারী সদস্য নির্বাচিত হন।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৯ মার্চ। ৩০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৩০টি।

সপ্তম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ১৪ জুলাই।

অষ্টম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর এবং প্রথম অধিবেশন শুরু হয় একই বছরের ২৮ অক্টোবর। এ সংসদের শুরুতে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি। কারণ সংরক্ষিত ৩০টি নারী আসন আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অষ্টম সংসদের শুরুতে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন ছিল না। পরে চতুর্দশ সংশোধনী, ২০০৪ পাসের মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৩০টি থেকে ৪৫টিতে উন্নীত করা হয়। এতে সংসদে মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৪৫ জনে। এই আইন প্রবর্তনকালে অষ্টম সংসদের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এবং অষ্টম সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে শুরু করে ১০ বছরকাল অতিবাহিত হওয়ার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত ৪৫টি আসন কেবল নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

নবম জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর। প্রথম অধিবেশন শুরু হয় ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। ৩০ জুন ২০১১ তারিখে সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৪৫টি থেকে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনসহ নবম সংসদের মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩৫০টি।