বিস্ময়কর এই বিজ্ঞানের যুগে চিকিৎসা সেবা দিন দিন আকাশচুম্বী সাফল্য যাচ্ছে।কলেরা, প্লেগ, বসন্ত, ক্যান্সার থেকে করোনা সবই মানুষের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আধুনিক বিশ্বে বর্তমানে এমন কোন রোগ নাই যে রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না। বিভিন্ন রোগে যখন মানুষের মৃত্যু সাফল্য জনকহারে কমে এসেছে তখন কুষ্টিয়া জেলায় সাপে কাটলে মৃত্যু শতভাগ। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে সাপে কাটার কোন চিকিৎসা না থাকায় ওঝা ও কবিরাজের অপচিকিৎসার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অসচেতন মানুষ। তাছাড়া অবশ্য তাদের হাতে বিকল্প কি'ই বা আছে। হাসপাতালের একটি সূত্র থেকে জানাগেছে ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে সাপে কাটা আহত ৩২ জন রোগী আসে তার সব গুলো রোগী মৃত্যু বরণ করেন। একই সূত্রে জানা যায় সাধারন সাপের কামড়ে আহত রোগী হাসপাতাল পর্যন্ত পৌছাতে পারলেও বিষধর সাপের কামড়ে আহত রোগী ৭৫% হাসপাতালে আসার পথেই মৃত্যু বরণ করেন। বাকি ২৫% হাসপাতালে আসলেও বিনা চিকিৎসায় তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনেরা। সাপে কাটা আহত রোগীকে সময়মত অ্যান্টিস্নেক-ভেনাম ভ্যাকসিন না দেওয়ার কারনে সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে সাপে কাটা রোগীকে সময়মত হাসপাতালে না এনে ওঝা কবিরাজের কাছে নিয়ে অপচিকিৎসা করে সময় নষ্ট করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসায় মৃত্যুর প্রধান কারন বলে মনে করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাধারন মানুষ অভিযোগ করে বলেন, বিষধর সাপের কামড়ে আহত রোগীর চিকিৎসার সময় পাওয়া যায় খুব কম। দ্রুত অ্যান্টিস্লেক-ভেনাম ইনজেকশন দেওয়া প্রয়োজন। জেলা শহরে আসতে অনেক সময় প্রয়োজন,, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গুলো নিরুপায় হয়ে কেউ কেউ ওঝা বা কবিরাজের চিকিৎসা গ্রহন করেন। এজন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুলোতে অ্যান্টি-ভেনাম ঔষধ রাখা জরুরী বলে দাবি করেন সাধারন মানুষ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা স্বর্গ পুর গ্রামের কপিল উদ্দিন (৫৫) কে সাপে কাটলে দ্রুত কুষ্টিয়া সদর হাসপালে ভর্তি করে তার স্বজনেরা। হাসপাতালে এসে ঘন্টা দুই বেঁচে ছিলেন। এ সময় কোন তার শরীরে এন্টিস্লেক - ভেনাম পুশ করেনি বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার। এ দিকে দৌলতপুরের সোনিয়া খাতুনের(৭) পরিবারের একই অভিযোগ। তারা অভিযোগ করেন সোনিয়াকে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি কিন্তু কোন এন্টিস্লেক- ভেনাম ঔষধ পুশ করেনি। অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার তাহেরপুর গ্রামের বলুল হোসেন (৩৫) কে সাপে কাটলে দুইজন ওঝাকে বাড়ি ডেকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা চালায় পরে অবস্থা অবনতি হলে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। স্বজনেরা অভিযোগ করেন হাসপাতালে ভর্তি করার পর অনেকক্ষণ বেঁচে ছিলো বকুল, এ সময় কোন চিকিৎসক তাকে কোন সাপে কামড়ের এন্টিস্লেক -ভেনাম ইনজেকশন পুশ করেনি। ঘন্টাখানেক পর বকুল মৃত্যু বরণ করেন। হাসপাতালের একজন নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, গত ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩২ জন সাপে কাটা রোগীর সবাই মৃত্যু বরণ করেছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়া সাপে কামড়ের এন্টিস্লেক - ভেনাম বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আশরাফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য আমার কাছে নাই।কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাঃ এইচএম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে এন্টিস্লেক- ভেনাম ঔষধ সংরক্ষণ করা হয়।বিষধর সাপের কামড়ের রোগীকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়। চিকিৎসার সাপে কামড়ের স্থান দেখলেই বুঝতে পারেন বিষধর সাপে কামড় কিনা।
কুষ্টিয়ার সচেতন মানুষ কনে করেন, সাপে কাটলে মানুষ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা না পাওয়া বড় উদ্বেগের বিষয়। আবার কুষ্টিয়াতে বিশ্বের বিষধর সাপ রাসেল ভাইপারের অস্তিত্ব খুজে পাওয়াগেছে। তাই সাপের কামড়ের এন্টিস্লেক-ভেনাম ঔষধ জেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে সব স্থানে সংরক্ষণ করার দাবি করেন।