মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু শহরে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও উখিয়া সীমান্তে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমেছে।
তবে টেকনাফে নাফ নদীতে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ এবং লবণমাঠ ও খেতে কাজ করতে পারছেন না স্থানীয়রা।
এছাড়া সংঘাত চলমান থাকলে সুযোগ পেলে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে সীমান্ত বিজিবির কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয় সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ জানান, রোববার প্রায় সারাদিন শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় ছিলাম। ওপারে সংঘাত চলছে। যে কারণে মাঝে মাঝে গোলার শব্দ ভেসে আসছে। তবে তা এপারের লোকালয় থেকে অনেক দূরে।
দেশটিতে সংঘাতের কারণে স্থানীয়রা নাফ নদীতে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
এক ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম জানান, রোববার রাতে পরিস্থিতি শান্ত ছিল। কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। তবে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে থেমে থেমে আবারও গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমারের মংডু শহরের আশপাশের মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাপাড়া, মাঙ্গালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় দেশটির সরকারি বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলেছে। ওই এলাকাগুলো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত। সেখানকার বাসিন্দারা প্রাণ বাঁচতে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটছেন। অনেকে বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া নদী ও খালে অবস্থান নিয়েছেন।
এ নিয়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের নাফ নদী দিয়ে আবারও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলেও তা সংখ্যায় আগের মত ব্যাপক নয়।
টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী জানান, সংঘাতের বিষয়টি মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সমস্যা। তবে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে এখানে (বাংলাদেশে) যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য বিজিবি ও কোস্টগার্ড টহল বাড়িয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তের বাসিন্দাদেরও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, সম্প্রতি রোহিঙ্গাবিষয়ক টাস্কফোর্সের সভায় নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় জাতিসংঘের একটি সংস্থার পক্ষ থেকে সীমান্তের ১৯টি পয়েন্টে অবস্থানরত প্রায় ৯০০ রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়ার একটি প্রস্তাবও আসলে তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বইতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এছাড়াও এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলাসহ দিন দিন নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনো পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢুকতে দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা এবং বর্তমানে নতুন পুরনো মিলে বাংলাদেশ আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার সাড়ে ছয় বছর পার হলেও মিয়ানমারের নানা ছলচাতুরির কারণে একজন রোহিঙ্গাকে সেদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা শিবির এবং নোয়াখালীর সাগরদ্বীপ ভাসানচরে বসবাস করছে। তবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যেহেতু রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, সেহেতু এই ইস্যুতে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এখন বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য। এ বিষয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।