ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের সিনেমা হলের গল্প

হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ০৪:৫৪:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

সিনেমা হলে গিয়ে বড়পর্দায় সিনেমা দেখা একসময় প্রতিটি বাঙালির কাছে ছিল আকর্ষণীয় বিষয়। ছুটির দিনে কিংবা অন্য কোনো উপলক্ষে পরিবারের সবাই মিলে সিনেমা হলে যাওয়া খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল। সিনেমার মতো কথা বলা, পোশাক পরা সংস্কৃতির একটা অংশ ছিল। 

“পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্থানে সর্ব প্রথম ছবি তোলা হয় ১৮৫৬ সালে। ছবিটা ছিলো একটা ডকুমেন্টারী। এরপর ছবি তোলা হয় পুরো একশ’ বছর পর ১৯৫৬ সালে। ছবির নাম“ মুখ ও মুখোশ”। ১৯৫৯ সালে জাগো হুয়া সাভেরা, আকাশ আর মাটি,মাটির পাহাড় ও এদেশ তোমার আমার। এরপর ১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানী তৈরী করেন ‘আসিয়া’ এবং এহতেশাম নির্মাণ করেন রাজধানীর বুকে।

স্বাধীনতার পূর্বে উর্দু ছবি নির্মাণের জোয়ার থাকলেও স্বাধীনতার পর একচেটিয়া বাংলা ভাষায় নির্মিত ছবি তৈরী হয়। বাঙালীর বিনোদন হয়ে যায় সিনেমা হল। অবসর সময়ে কিংবা কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে সিনেমা হলে বড়পর্দায় সিনেমা দেখা কিছু বাঙালীর নেশা হয়ে যায়। নব্বই দশকের জোয়ার শেষে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেই জোয়ারে ভাটা নেমে আসে। ২০০০ সালের দিকে প্রথমে মোবাইল ফোন, এরপর ক্যামেরা ফোন। দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস তাদের প্রথম ক্যামেরা ফোন চালু করেন। এরপর ২০০৬ সালে প্রায় সব মোবাইলে ক্যামেরা যুক্ত হয়।

২০১০ সালে এইচটিসি ইভো থ্রিডি ফোনের কল্যাণে মানুষ তোলার পাশাপাশি ভিডিও করতে পারতো। যা পরবর্তীতে ম্যাজিকের পর ম্যাজিক আকার ধারন করেছে। এখন মোবাইলে কথা বলা, ছবি তোলা, ভিডিও করা এবং নেট ব্যবহারে গুগলের  মাধ্যমে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা। এখন আর সিনেমা দেখতে সিনেমা হলে যেতে হয় না, হাতের মোবাইলে সবই সম্ভব। এখন  রেডিওতে ভালো গানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। তারপরও বড়পর্দায় সিনেমা দেখার মজা আলাদা, বন্ধুবান্ধব নিয়ে একত্রে গল্পের মাঝে সিনেমা দেখা। এখনও অনেক বাঙালী সিনেমা হলে সিনেমা দেখে। যদিও ভিডিও প্রাইরেসীর কারনে অনেক দর্শক টেলিভিশনের ছোটপর্দায় মন দিয়েছে। তারা তিনঘন্টা সিনেমা হলে না কাটিয়ে টেলিভিশন কিংবা কম্পিউটারের মনিটরে ৩ ঘন্টার সিনেমা টেনেটুনে এক ঘন্টায় শেষ করবে। এছাড়া  বড়পর্দায় দেখার মতো পরিবেশ হারিয়ে গেছে চলচ্চিত্র নির্মাতা, পরিবেশক ও প্রযোজকদের কারণে। সিনেমায় কাটপিস, নোংরা ছবি এবং নোংরা পরিবেশই এ জন্য দায়ী। প্রথম আলো পত্রিকা ও সাংস্কৃতিকমনা টাঙ্গাইলের সাংবাদিক কামনাশীষ শেখরের কথা “ভালো গল্পের অভাব, নোংরা পরিবেশের কারণে সিনেমা হলে যেতে মন চায় না, ভালো গল্প এবং ভালো পরিবেশ তৈরী হলে সিনেমা হলে যাবো।” 

এক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের গল্প ও নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি প্রদর্শন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ। একটা সুন্দর চলচ্চিত্র নির্মাণের পর তা পেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের মাধ্যমেই তার সফলতা আসে। প্রেক্ষাগৃহে সুন্দর পরিবেশে দর্শকসমাগম হলেই পুঁজি ফিরে আসে, শিল্পমনা ব্যবসায়ীরা সিনেমা শিল্পে মূলধন লগ্নি করে। অথচ বর্তমানে সিনেমা পাগল বাঙালী সিনেমা হল বিমুখ। 

চলচ্চিত্র শিল্পে পড়েছে হুমকির মুখে। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির নানা সমস্যায় দিনের পর দিন একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলগুলো। সেখানে নির্মিত হচ্ছে শপিংমল কিংবা অফিসঘর। দেশে যেখানে প্রেক্ষাগৃহ ছিল ১২ শতাধিক এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৬০টির মতো। 

আধুনিক যুগের দর্শকরা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু বেছে নিয়েছে। আগে বিশ্বের দূরদূরান্তের খবরাখবর টেলিভিশন ও সিনেমার বড়পর্দায় দেখে মানুষরা তৃপ্তি লাভ করতো। আর এখন বর্তমান জগতের বিস্ময় মোবাইল ফোন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। এখন আর সিনেমা হল কিংবা টেলিভিশন লাগে না। মন চাইলেই গুগলে সার্চ। 

অথচ একসময় প্রেক্ষাগৃহগুলোই দেশের মানুষের বিনোদনের  অন্যতম কেন্দ্র ছিলো। অবসর পেলেই মানুষ ছুটে যেতো এসব প্রেক্ষাগৃহে; কিছু বিনোদন, কিছু শিক্ষা, সামাজিকতার আশায়। বিশেষ দিন কিংবা নতুন সিনেমা মুক্তির দিনগুলোতে এই সব প্রেক্ষাগৃহ ছিল রীতিমত দর্শকে ভরপুর। টিকিট কাউন্টারে ভিড়, প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করতে ভিড়। টিকিট ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই অনেক প্রেক্ষাগৃহে কালোবাজারে টিকিট বিক্রয়, যেটাকে বলা হয় ব্ল্যাকে টিকিট ক্রয়। 

টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক জাফর আহমেদ বলেন“আগে কাজের ফাঁকে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছি, এখন সেই পরিবেশ, সেই সিনেমা গল্প নেই, এখন পরিবার নিয়ে একত্রে সিনেমা দেখা যায় না। আগের সেই মতো সেই দেখার মতো পরিবেশ কিংবা অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স তৈরী সিনেমা দেখতে হলে যাবো।”  এছাড়া সিনেমা দেখার ভক্ত আলমগীর, মনি, বুলবুল, বাবর আলীসহ অনেকেই হতাশা বর্তমান যুগের সিনেমার গল্প ও পরিবেশ। 

সারাদেশের মতো প্রভাব পড়েছে টাঙ্গাইল জেলায়ও। এই জেলার ১২টি উপজেলায় ৫১টি সিনেমা হল ছিল। বর্তমানে টিকে আছে মাত্র ৫টি। টাঙ্গাইল শহরের ৫টি সিনেমা হল রমরমা ব্যবসা করেছে এক সময়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকায় প্রতিটি হলে দর্শক সমাগম ছিল দেখার মতো। মানুষ সিনেমা দেখার জন্য হলে টিকিট কেনার জন্য, হলে প্রবেশের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকতো। প্রচন্ড গরম কিংবা বৃষ্টি বাধা হতো পারতো না। হলের ভিতরে গরমে ঘাম বের হলেও পিছু হটার কোনো কারণ উপায় নাই, দর্শকের চোখ আটকে আছে সিনেমার বড় পর্দায়। বিশেষ করে ঈদের দিনে সিনেমা দেখতে ঢল নামতো প্রতিটি সিনেমা হলো গুলোতে। সিনেমার টিকিট শেষ হয়ে যেতো। দর্শকের চাহিদা পূরণ করতে অনেকে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করে ব্যবসা করতো। সেই সময় এখন হারিয়ে গেছে। 

এখন সিনেমা হলের ভিতর দর্শক নাই। হাতে গোনা দর্শক হয়, কোনো শোতে কোন দর্শকই হয় না, তখন সিনেমা হল বন্ধ থাকে। আগের দিনে প্রতিদিন ৫টি শো চালু ছিল। সকাল ১০.৩০ মিনিটে, দুপুর ১.৩০ মিনিট, বিকেল ৪.০০টা, সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট ও সর্বশেষ শো রাত ১০.৩০ মিনিটে। রাতের শো দেখে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হতো। এখন সেই রাতের শো চলে না।  

মানহীন সিনেমা ও নোংরা পরিবেশের কারনে সারাদেশের মতো টাঙ্গাইল শহরের সিনেমা হল গুলো হারিয়ে গেছে, টিকে জরাজীর্ণ পরিবেশে টিকে আছে কেবল মালঞ্চ সিনেমা হল।  প্রথমে রওশন টকিজ, তারপর রুপসী সিনেমা হল, রুপবাণী সিনেমা ও সর্বশেষ চেহারা শুদ্ধ বন্ধ হলো কেয়া  সিনেমা হল। দোয়াতের তেল ফুরিয়ে গেলে যেমন আলো নিভু নিভু অবস্থা হয়, ঠিক সেভাবেই টিকে আছে মালঞ্চ সিনেমা হল। হলের সামনের সেই রমরমা অবস্থা নেই। হাতে গোনা কিছু দর্শক হলের সামনে ঘুরাঘুরি করছে। হলের সামনে লাইন করে পরোটা, সিঙ্গারা ও পুরীর দোকান, পাশে রিক্স্রার গ্যারেজ, গ্যারেজের পাশে ৭ তলা ভবন, হলের সামনে দু’পাশে একটা মনিহারী অন্যটা ওষুধের দোকান। টিকিট কাউন্টারে কোনো ভিড় নেই। পরিবেশ দেখে মনে হয় সর্বশেষ টিকে থাকা মালঞ্চ সিনেমা হলও হারিয়ে যাবে। সেরকমই আভাস দিলেন সিনেমা হলের বর্তমান ম্যানেজার জাহিদ মন্ডল। 

বিশ্বে করোনা ভাইরাসের আঘাত আসার পূর্বেই প্রতিমাসেই বড় ধরনের লোকসান হতো। এখন তো বন্ধ। ম্যানেজার আশায় আছেন এই করোনা মহামারী দূর হলে আবারও সিনেমা হলে দর্শক ফিরে আসবে। সরকার থেকে সিনেমা হলের জন্য বরাদ্দ অনুদানের অপেক্ষায় আছেন। অনুদান পেলে নতুনভাবে শুরু করতে পারবেন। জাহিদ মন্ডল ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘ইস্ ইউটিউবটা যদি বন্ধ করে দেয়া যেত! যদি উন্নতমানের ছবি   তৈরী হয় তাহলে সিনেমার আগের অবস্থা ফিরে আসবে’। তিনি আরো বলেন, ‘একটা রিক্সাওয়ালার ঘরে বিনোদনের মাধ্যম তার হাতে। মোবাইলে মাধ্যমে সে সিনেমা, গান ছাড়াও অনেক কিছু দেখে থাকে। তাদের সময় কোথায় অযথা সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখার? 

ইউটিউব ছাড়াও অনলাইনে চ্যানেলে সিনেমা ছাড়া বিনোদনের অনেক কিছু দেখানো হয়। আগে খেলাধূলা দেখতে মানুষ মাঠে যেত কিন্তু এখন অনলাইনেই দেখা যায়। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলার জনপ্রিয়তায় হারিয়ে গেলো সিনেমার অনেক দর্শক। 

মালঞ্চ সিনেমা হলে ৬ জন সিনেমা পাগল ভক্ত চাকরি করতো।  এর মধ্যে আজিজুর রহমান একজন। সে টিকিট মাস্টার। ১৯৭২ সালে যখন শহরের প্যারাডাইস পাড়ায় বর্তমান আর্টিজেন্স অফিস পাশে টিনের গুদাম ঘরে সিনেমা হল চালু হয় (কালি সিনেমা) তখন তার বয়স ছিল  ১৫ বছর। তখন থেকে আজ অবদী চাকরি করেছেন। শুরুতে তিনি বেতন পেতেন ৫৫ টাকা আর এখন ৩৬০০ টাকা।  দিঘুলিয়ার বাসিন্দা আজিজুর রহমানের ১টি ছেলে ও ১ মেয়ে। এই বেতনে তার চলে না, ৮ম শ্রেনী পাস করা  আজিজুরের অন্য পেশায় অভিজ্ঞতা নাই। তার ছেলে শফিকুল  একটা ভিডিও দোকানে চাকরি করে। 

বাসাইল উপজেলার ময়থা গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান মানিক। টাঙ্গাইল শহরে বাসা ভাড়া  করে থাকতেন আর ভিক্টোরিয়া রোডে (বর্তমান কিছুক্ষণ হোটেল) সুরুটি হোটেল চালাতেন। স্বাধীনতার পর রওশন সিনেমা হলের মালিক মোজাহারুল ইসলাম চৌধুরী লেবু যখন তার অধীনে মির্জাপুর অনামিকা সিনেমা হল ছেড়ে দিতে চাইলেন তখন তারা দুই ভাই মির্জাপুর হলটি দায়িত্ব নিয়ে নিলেন এবং নতুন করে নাম দিলেন মুক্তা সিনেমা হল। বছর দুই ব্যবসা করার পর ১৯৭২ সালে টাঙ্গাইল প্যাড়াডাইস পাড়ায় গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে মালঞ্চ সিনেমা হল চালু করেন। এরপর  ১৯৭৫ সালে ১৮ আগষ্ট তার ৪ ভাই  (আতাউর রহমান মানিক, বজলুর রহমান হীরা, ফয়জুর রহমান মাখন ও লুৎফর রহমান সানা) শহরের মিয়া পাড়ায় ৩০ শতাংশ ধানী জমিতে বিশাল আকারের সিনেমা হল নির্মাণ করেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত তাদের অধীনে ছিল। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে আমেরিকা প্রবাসী জুয়েলের নিকট মালঞ্চ সিনেমা হলটি মালিকানা বিক্রি করেন। সেই থেকে আদি টাঙ্গাইলের স্যাটেলাইট (ডিশ) ব্যবসায়ী জাহিদ মন্ডল ভাড়া নিয়ে মালঞ্চ সিনেমা চালাচ্ছেন। 

টাঙ্গাইল শহরে প্রথম সিনেমার ব্যবসার সূত্রপাত করেন ময়মনসিংহ ছায়াবানী সিনেমা হলের মালিক নটুকর। প্রায় ১৯৬০ সালের দিকে শহরের পার্ক বাজারের পাশে আরফান খানের গুদাম ঘর ভাড়া নিয়ে কালী সিনেমা চালু করেন। বছর দুই চালানোর পর শহরের বাসিন্দা আজাহার উদ্দিন চৌধুরী, সামাদ উকিল, রউফ মিয়া ও নাসির উদ্দিনের বাবার হাতে কালি সিনেমার ভার তুলে দেন এবং তারা চুটিয়ে ব্যবসায় এগিয়ে যেতে থাকেন। যদিও আজাহার উদ্দিন চৌধুরী ছাড়া বাকি অংশীদারগণ ব্যবসায় মনোযোগ না দিলে আজাহার উদ্দিন  চৌধুরী তাদের অংশীদারিত্ব কিনে নতুন করে লাইসেন্স করেন। এসডিও (নামটা জানা যায়নি) বরাবর প্রিটিশন করেন এবং সেই এসডিও আজাহার উদ্দিন চৌধূরী পক্ষে লাইসেন্স করে তাকে অনুরোধ করে তার মৃত কণ্যা রওশনের নামে সিনেমা হলটির নাম দেয়া যায় কিনা? আজাহার উদ্দিন চৌধুরী রওশন টকিজ নাম দিয়ে শহরের নিরালা মোড়ে করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব (সিডিসি)হল রুম ভাড়া নিয়ে সিনেমা হল চালাতে থাকেন। পরবর্তীতে আজাহার উদ্দিনে ৩ ছেলে আজিজুর রহমান চৌধুরী খোকা, মোজাহারুল ইসলাম লেবু ও আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী আবু দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এর মধ্যে মেজ ছেলে মোজাহারুল ইসলাম লেবু একক প্রচেষ্টায় ধনবাড়ী উপজেলায় মধুসন্ধ্যা সিনেমা হল, মির্জাপুর উপজেলায় অনামিকা সিনেমা হল ও নাগরপুর উপজেলায় আরো একটি সিনেমা হল নির্মাণ করে ব্যবসা করেন। যা স্বাধীনতার পর পর তার একক মালিকানাধীন সিনেমা হলগুলি বিক্রি করে দেন। 

১৯৭৬ সালে শুরুর দিকে রওশন টকিজের অংশীদারগণ ও ৩ ভাই মিলে  শহরের আকুরটাকুরের বটতলায় আরো একটি সিনেমা হলে নির্মাণ করেন। দুই তলা বিশিষ্ট পাকা দালানের কারনে সুন্দর দেখা যেত। যা ‘রুপসী সিনেমা’ নাম করন করেন। মোজাহারুল ইসলাম লেবু ১৯৮৭ এবং ১৯৮৯ সালে এককভাবে এলাসিনে আশা সিনেমা এবং পাথরাইলে চৌধুরী টকিজ নামে দুটি সিনেমা হল তৈরী করেন যা এখন বন্ধ। বন্ধ হয়ে যায় ২০০৫ সালে শহরের মাঝে রওশন টকিজ। করোনেশন ড্রামাট্রিক ক্লাব পরবর্তীতে সেখানে গড়ে তুলেন সিডিসি শপিং কমপ্লেক্স্র। ২০০৮ সালে রুপসী সিনেমা হলটিও বন্ধ হলে সেখানে ডেভলভপার  প্রিমিও প্রোপার্টির সাথে যৌথ মালিকানায় ১০ তলা বহুতল ভবন তৈরী হয়েছে। 

১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে ১০ শতাংশ জমির উপর আফজাল চৌধুরী শহরের পূর্ব আদালত পাড়ায় তার স্ত্রীর কেয়ার নামে সম্পূর্ণ টিন দিয়ে  তৈরী করেন কেয়া সিনেমা হল। পরবর্তীতে হলের একপাশেই তিনতলা বিল্ডিং তৈরী করে। শুরুর পর আশি-নব্বই দশকে জমজমাট ব্যবসা হয়। ২০১০ সালের পর থেকে সিনেমায় লোকসান হতে থাকলে ঢাকার সিনেমার প্রযোজকদের সহযোগিতায়  কিছুদিন ব্যবসা চালিয়ে যান। ২০১৯ সালে জানুয়ারী মাসে তার ছেলে ফিরোজ চৌধুরী সিনেমা হলটি বন্ধ করে দেন। বর্তমানে তিন তলা ভবনটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। জানা জানা গেছে শপিং মল করার চিন্তা ভাবনা আছে। সেখানে সিনেপ্লেক্স নামে কিছুই থাকবে না। 

১৯৬৪ সালে প্যাড়াডাইস পাড়ার বাসিন্দা মন্টু চৌধুরী তার স্ত্রী আনোয়ারা চৌধুরীর উৎসাহে  শহরের মেইন রোডে তিন তলার চমৎকার ডিজাইনে ভবন  নির্মাণ করে নাম দেন রুপবাণী সিনেমা হল। যা এখন বন্ধ অবস্থায় ময়লা আর্বজনার চেহারা নিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৪ সালে দিকে সিনেমার বাজার মন্দার পাশাপাশি সিনেমা হলটি মালিকানা বিরোধে হলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ বড় ধরনের বৈদ্যুতিক বিল বাকী পড়ে যাওয়া। 

এছাড়া টাঙ্গাইল সদরের করটিয়া ইউনিয়নে ফরিয়া ও নন্দিনী নামে দুটি সিনেমা হল ছিল, যা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। 

বর্তমানে মালঞ্চ সিনেমা হলটি বন্ধ হলে টাঙ্গাইল শহরে বিনোদনের জন্য কোনো সিনেমা হল থাকবে না। যা পরবর্তীতে ভালো সিনেমা তৈরী হলেও টাঙ্গাইলের দর্শকদের দেখার কোন উপায় থাকবে না। তাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেটের ইউটিউবে। এখন আর বড় পর্দা নয়, হাতের মুঠোয় মোবাইলে আছে বিনোদনসহ তথ্যসমৃদ্ধ জীবন কাহিনী, শুধু নেট থাকলেই হলো। তারপরও বড়পর্দায় সিনেমা দেখার আলাদা দর্শক থাকবেই। করোনা মহাকাল কেটে গেলেই নতুন করে উদিত হবে নতুন স্বপ্ন। যে স্বপ্ন বাস্তব রুপলাভ করবেই, সেই আশায় চেয়ে থাকা।