টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ হওয়া ৪টি প্রকল্পে একটি প্যাকেজের টাকা নয়-ছয়ের পায়তারার অভিযোগ উঠেছে।
সদর উপজেলার ছিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদে ৪টি প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৪টি প্রকল্পের মধ্যে সুবর্ণতলী মাদরাসা থেকে শহিদুর মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা, পাকুল্যা মুসলিম সংঘ ঘরের প্লাস্টার, দরজা, জানালা ও টয়লেট নির্মাণের জন্য ৩ লাখ টাকা, গালটিয়া বাজার বটতলা চত্তর নির্মাণ ও টাইলসকরণের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং পাকুল্লা শাহান শাহ পাড়া জামে মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পের এসব কাজ শেষ না করেই সদর উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে পুর্নবিল সাবমিট করে সাব ঠিকাদার ছিলিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাদেক আলী। কাজ শেষ ও বিল সাবমিটের বিষয়ে মূল ঠিকাদার প্যারেন্টস ইন্টার ন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রাসেল মিয়া কিছুই জানেন না।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে সুবর্ণতলী মাদরাসা থেকে শহিদুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত ৩ ধাপে কাজ সম্পন্ন হয়। সেই সময় ওই রাস্তায় আলিমের বাড়ি হতে শহিদুল ইসলামের বাড়ির সামনে দিয়ে লুৎফরের বাড়ি পর্যন্ত ৩ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটারের আরেকটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। সেই কাজ আজও বাস্তবায়ন হয়নি। অবাস্তবায়িত সেই রাস্তায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পুণরায় ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প তৈরি করা হয়। যা শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ।
আরও জানা যায়, এই প্যাকেজের আরেকটি প্রকল্পে মসজিদের কাজে নয়-ছয় করা হয়েছে। ৩ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে মসজিদ কমিটি পেয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাকি টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দিতে হয়েছে বলে মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর সামনে জানিয়েছেন সাব ঠিকাদার সাদেক আলী। তাই ৩ লাখ টাকার প্রত্যয়নপত্র সাব ঠিকাদারের হাতে দেয়া হয়েছে।
এদিকে এলজিইডি’র টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলছেন, ঠিকাদার এ পর্যন্ত কোন টাকা হাতে পাননি। রাজস্ব খাতের এই প্যাকেজের আরেকটি প্রকল্পের পাকুল্যা মুসলিম সংঘ ঘরের প্লাস্টার, দরজা, জানালা ও টয়লেট নির্মাণের জন্য ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মুসলিম সংঘ ঘরের দরজা, জানালা থাকলেও করা হয়নি প্লাস্টার, বসানো হয়নি টয়লেট।
সুবর্ণতলির আলিম মিয়া বলেন, আমার বাড়ির সামনে থেকে শহিদুল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত আগেই রাস্তা ছিলো। পরে আমার বাড়ি থেকে লুৎফরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছে। কিন্তু আমরা কোন রাস্তা পাইনি। এখন শুনতাছি এই কাজ অন্য পাশে চলে গেছে।
শহিদুল মেম্বার বলেন, রাস্তার কাজ আজ থেকেই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সাদেক চেয়ারম্যান। তবে বিল সাবমিট করা হয়েছে কিনা তা আমি জানি না।
মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ চাঁন মিয়া বলেন, আমার কাছে ১ লাখ ৫০ টাকা দিয়ে ৩ লাখ টাকার প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর নিয়েছে। বাকি টাকার কথা জানতে চাইলে সাদেক আলী বলে এই টাকা উঠাতে বিভিন্ন জায়গায় খরচ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, ছিলিমপুর ইউনিয়নের আগের চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্র দাখিল করে বিল সাবমিট করে। আমরা তাকে ফাইনাল বিল দেয়ার জন্য প্রস্তাবনা দেই। পরে আমরা জানতে পারি কাজ সম্পন্ন হয়নি। তার চেক আমরা আটকিয়ে দেই। তারপর উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফিরোজ রেজাকে কাজের বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের জন্য কৈফিয়ত তলব করি।
তিনি আরও বলেন, সরেজমিনে গিয়ে সতত্যা মিলেছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, আমার কাছে ফাইনাল বিল সাবমিট করেছিল। ব্যস্ততার কারণে সব প্রকল্পের কাজ দেখা সম্ভব হয় না। স্বাক্ষর করার আগে আমি কিছু প্রকল্পের কাজ দেখে থাকি। এই প্রকল্পের কাজ আমি মাঠে গিয়ে দেখি কাজে অসঙ্গতি রয়েছে। এসব দেখার পর ইঞ্জিনিয়ারকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলেছি।