ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিবন্ধন গ্যাড়াকলে পিছিয়ে গেল সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:৫০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

নিবন্ধনের জন্য প্রস্থুতি গ্রহণ না করে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়ে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন, এমন মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। অনেকে বলেছেন, নিবন্ধন ছাড়া যদি সেন্টমার্টিন ভ্রমন যেতে না পারে তবে আগে নিবন্ধন প্রক্রীয়া শেষ করে যাওয়ার অনুমতি না দিয়ে এটি অপরিপক্ষ সিন্ধান্ত বলে জানান পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। তবুও নানা ধরনের সমস্যা ও বিধিনিষেধের পর সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচলে অনুমতি পাওয়া গেলেও যাত্রী স্বল্পতার কারনে দ্বীপে যেতে পারছেনা জাহাজ।

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিধি-নিষেধের বেড়াজালে এতদিন শুরু করা যায়নি দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। অতঃপর চলাচলের অনুমতি মিললেও এবার সংকট যাত্রীর। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সেই যাত্রা শুরু করা যায়নি যাত্রীর সংখ্যা না পাওয়ায়।

চলতি মৌসুমে প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া কয়েকটি জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এই জাহাজ চলাচল শুরু হবে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসন ও জাহাজ সংশ্লিষ্টরা।

এই রুটে পর্যটক নিয়ে চলাচলের অনুমতি পেয়েছে জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ। এই জাহাজের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৩৫০ জন। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকেট বুকিং মাত্র ৯ জন বলে জানিয়েছে জাহাজ কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার যাত্রা স্থগিত করে আগামী ১ ডিসেম্বর তারিখ থেকে জাহাজ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটি ঘাট দিয়ে বৃহস্পতিবার জাহাজ ছাড়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু যাত্রী সংকটে জাহাজ ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ৩৫০ জন ধারন ক্ষমতার জাহাজটি শতাধিক যাত্রী হলেও ছাড়া যেত। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত যাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ৯ জন। নিবন্ধন জঠিলতা ও সাধারন পর্যটকদের মাঝে সেন্টমার্টিন নিয়ে নেতিবাচক সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ায় আগ্রহ হারিয়েছে পর্যটকগণ। সাধারণত অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথম দিকে শুরু হয় দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল। কিন্তু এবার সরকারের নেওয়া উদ্যোগ ও প্রশাসনিক বিধিনিষেধের জটিলতায় এখনও তা শুরু করা সম্ভব হয়নি।

গত ২২ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভায় সেন্ট মার্টিনে নানা বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে নৌযান চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, নভেম্বরে দ্বীপে পর্যটক গেলেও দিনে ফিরে আসতে হবে, সেখানে রাত্রিযাপন করা যাবে না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাত্রিযাপন করা যাবে। প্রতিদিন পর্যটকের সংখ্যা গড়ে ২ হাজারের বেশি হবে না। দ্বীপে শব্দদূষণ করা যাবে না, রাতে আলো জ্বালানো যাবে না, বার-বি-কিউ পার্টি করা যাবে না।

মূলত নভেম্বরে দ্বীপে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞাই পর্যটকদের এমন অনীহার কারণ বলে মন্তব্য করেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, যেহেতু ডিসেম্বরে সেখানে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই ১ ডিসেম্বর থেকে হয়তো পর্যটকের সংকট থাকবে না।

সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা ও পর্যটক সীমিত করা ও নিবন্ধন জঠিলতার কারনে কক্সবাজারের পর্যটন খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ। তিনি বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা নানা ক্ষতির মুখে পড়বেন। এরই মধ্যে অনেকে বিনিয়োগ করায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তারা।

কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দিন এবিষয়ে বলেন, উপজেলা কমিটি বলতে পারবে নিবন্ধন বিষয়ে। আর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ না করে জাহাজের অনুমতি বিষয়ে তিনি পাশ কাটিয়ে যান উত্তর না দিয়ে।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/একে