ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা কাটলেও আলোর মুখ দেখছে না পান রপ্তানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ ১১:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

 

পান রপ্তানিতে কেটেছে ছয় বছরের নিষেধাজ্ঞা। গত বছরের ২৬ মে থেকে ইউরোপে ফের পান রপ্তানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। ওইদিন এক টন পান রপ্তানি করে ‘ইউরোপে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পান রপ্তানি’ শীর্ষক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

এরপর কেটেছে আট মাস। কিন্তু সুদিন ফেরেনি পান রপ্তানিতে। নিষেধাজ্ঞার আগে যেখানে বছরে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার টন পান রপ্তানি হতো, সেখানে গত আট মাসে রপ্তানি হয়নি ১০০ টনও।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, পান রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আর আগে রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশ যেত ইইউ জোটে থাকা দেশ যুক্তরাজ্যে। এখন ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) হয়েছে। এ কারণে ইইউ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও যুক্তরাজ্য সেটা আমলে নেয়নি। তারা এখনো বাংলাদেশের পান নিচ্ছে না।

যুক্তরাজ্য বলছে, তারা বিষয়টি নিজেদের পার্লামেন্টে তুলবে। এরপর নতুন নিয়মনীতি করে বাংলাদেশ থেকে পান নেবে। তবে এ কার্যক্রম এখনো কতটা সময়সাপেক্ষ সেটি নিশ্চিত নয়।

রপ্তানিকারকরা আরও জানান, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরে এর মধ্যে ইইউতে যেটুকু পান গেছে সেগুলো ফ্রান্সে। সে বাজার খুবই ছোট। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ ও মালয়েশিয়ায় পান রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু সেটা আগের সময়ের সার্বিক রপ্তানির তুলনায় খুবই নগণ্য।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, পানের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল লন্ডন (যুক্তরাজ্য)। সেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রচুর ভারত ও পাকিস্তানের মানুষ রয়েছে। তারাই পান খান। ওই বাজারে পান না দিতে পারলে এ নিষেধাজ্ঞা ওঠার কোনো সুফল আমরা পাবো না।

তিনি বলেন, জানুয়ারিতে লন্ডন তাদের সিদ্ধান্তে জানিয়েছে বিষয়টি তাদের পার্লামেন্টে উঠবে, তারপর সিদ্ধান্ত আসবে। সেটা কতদিন বা কত সময় পর তা নিশ্চিত নয়।

নিষেধাজ্ঞা এসেছিল যেভাবে

একজন নারী অসুস্থ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমদানি করা বিভিন্ন দেশের পান পরীক্ষা করে যুক্তরাজ্য। এরপর পানে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইইউ বাংলাদেশ থেকে পান রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

এরপর নানা পদক্ষেপে ২০১৯ সালে দেশের পান সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হলেও ধাপে ধাপে ইইউ শর্ত ও নিষেধাজ্ঞা বর্ধিত করেছে। শেষ জোটের শর্তে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত পান উৎপাদনসহ শিপমেন্ট পর্যন্ত উত্তম কৃষিচর্চা (গ্যাপ), গুড হাইজিন প্র্যাকটিসেস (জিএইচপি), গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস (জিএমপি) অনুসরণ করার শর্তে এ নিষেধাজ্ঞা ওঠে গত ফেব্রুয়ারিতে। পাশাপাশি রপ্তানির জন্য এখন আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অ্যাক্রিডিটেড পরীক্ষাগার থেকে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ নিতে হচ্ছে।

ইইউ জোট এবং যুক্তরাজ্যও ২০১৯ সালের পরে কয়েক দফা পান পরীক্ষা করেছে, যা সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়ামুক্ত ছিল।

যা করেছে বাংলাদেশ

২০১৭ থেকে ২০১৯ সালে কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বিএফভিএপিইএ নিষেধাজ্ঞা তোলার শর্তের বিপরীতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়। প্রথমত, বাংলাদেশ পান আবাদের এলাকা নির্বাচন করে সেগুলোতে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, উত্তম কৃষিচর্চার আলোকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন, মনিটরিং, ট্রেসিবিলিটি বা শনাক্তকরণ, পানের স্যাম্পল পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।

ওই কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বিএফভিএপিইএর উপদেষ্টা কৃষিবিদ মনজুরুল ইসলাম বলেন, পরবর্তীসময়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে পানে সালমোনেলা একটি প্রাণীবাহী রোগ, যা পানের বরজে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পানি ও পশু-পাখি এবং মানুষের মাধ্যমে বিস্তার ঘটেছিল। ফলে সবক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার, পশু-পাখিমুক্ত বরজ, চাষাবাদ থেকে প্যাকেজিং পর্যন্ত জড়িত সবার হাইজেনিক থাকা এবং ক্লোরিন পানির ব্যবহারে সহজে এ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া এখনো কৃষক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ, রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণ, নিয়মিতভাবে পানের জমির মাটি ও পানি পরীক্ষা, রপ্তানি বাজারের জন্য নিরাপদ ও বালাইমুক্ত পান উৎপাদনের ব্যবস্থাও চালু রয়েছে। ফলে ২০১৯ সালের পরে পানে আর এ ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়নি।