ঢাকা, মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পরীমনির পক্ষে এবার মুখ খুললেন সাকিব খান

Author Minhaj Uddin | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৩ অক্টোবর ২০২১ ০৮:০২:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির গ্রেপ্তার ও কারাগারে  যাওয়ার ঘটনায় এবার নিরবতা ভাঙলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সাকিব খান।

মাদক মামলায় গ্রেফতারের পর গত ৭ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। শুরুতে শিল্পীদের তেমন কাউকেই পরীর পক্ষে কথা বলতে দেখা না গেলেও  এখন শোবিজের অনেকেই পরীমনির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।  শনিবার (১৪ আগস্ট) পরীমনি ইস্যুতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাকিব খান।

ফেসুবকে দেওয়া সাকিব খানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

'খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গত কয়েকদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনির হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমণিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সহকর্মী হিসেবে যতদূর জানি পরীমণি বাবা-মা হীন। তার বেড়ে ওঠা পারিবারিকভাবে আর পাঁচটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠা, স্ট্রাগলে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। হয়তো সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে পরীমণি অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমণির শতবর্ষী নানা তার নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার এই ভয়াবহতাও আটকাতে পারেনি তার বৃদ্ধ নানাকে। রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কি নিষ্ঠুর! পরীমণির সঙ্গে নাকি দেখাই হলো না বৃদ্ধ নানার। আদালত চত্বরেই পরীমণির নানাকে বলতে শুনেছি, “পরীমণি নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।”

পরীমণির মামলা এখন বিচারাধীন। ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। সে যে মামলায় গ্রেফতার হয়েছে, তার কী অপরাধ সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। কিন্তু তার আগে পরীমণির জীবন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেভাবে তাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, এটা সত্যি দুঃখজনক।

আরও দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমণি গ্রেফতারের পর তার প্রতি কোনো ধরণের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। মুহূর্তে পরীমণির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে! এ যেন কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটে!

সমিতির এই আচরণ সত্যিই খুব রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে বিবেকবান অনেক সিনিয়র জুনিয়র শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের আক্ষেপ রয়েছে। শিল্পীর সাথে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, এখনকার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?

বিগত দিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচারণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এই শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা।

এমনিতেই নানা কারণে সিনেমা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তার মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরী হলে সামনে আরো ঘোর বিপদ।

যারা পরীমণিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরকেও খুঁজে বের করা উচিত। পরীমণি ত্রিশটির বেশি সিনেমার সাথে জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তার হাতে আছে আরও বেশ কিছু সিনেমা। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমাতেও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে তাদেরও আয়ের উৎসও খুঁজে বের করা উচিত।

সহশিল্পী হিসেবে আশা রাখি, পরীমণির ক্ষেত্রে আইন তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। পরীমণি যখন ফিরবে তার ভুল থেকে শিক্ষাও নেবে। যে শিক্ষা তার আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।'

উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট পরীমনিকে তার রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড আ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত ৫ আগস্ট চিত্রনায়িকা পরীমনির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে র‌্যাব মামলা দায়ের করে। পরে দুই দফা রিমান্ড শেষে শুক্রবার (১২ আগস্ট) তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।