কাল বুধবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট। এরই মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। সোমবার (১৯ জুন) মধ্যরাত থেকে নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা বন্ধ । এদিকে শেষ দিন সোমবার ধুম বৃষ্টির মধ্যেও জমজমাট প্রচারণায় ব্যবস্ত ছিলেন প্রার্থীরা। শেষ সময়ে পাড়া-মহল্লা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বস্তি চষে বেড়ান প্রার্থীরা।
সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন ৮ জন। ইতোমধ্যে নির্বাচন বর্জন করে মাঠ ছেড়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। এছাড়া দলীয় মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ও জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম। এর মধ্যে জাকের পার্টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রচারণায় সরব নয়। অন্যদের প্রচারণা নেই বললেই চলে। ভোটের মাঠে এখন বেশ সরব আনোয়ারুজ্জামান ও বাবুল।
ধারণা করা হচ্ছে, এই ৮ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টি মনোনীত নজরুল ইসলাম বাবুলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনিবার মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্মার্ট সিটি বিনির্মাণে ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। আর রোববার অপর প্রার্থী নজরুল ইসলাম ২১ দফা ইশতেহারে পরিকল্পিত আধুনিক নগরীর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে পরপর তিন দফা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গলের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। এরপর বিগড়ে যান নৌকার প্রার্থীসহ কর্মী-সমর্থকরা। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের আব্দুল হানিফ কুটুও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেন নৌকার প্রার্থীকে কটাক্ষ করে। কিন্তু এসবের পালটা জবাব না দিয়ে সংযত অবস্থানে নৌকার আনোয়ারুজ্জামান। তিনি বলেন, তারা নাটক করছেন।
প্রচারণা জমে উঠলে প্রথমে বর্তমান মেয়রের উন্নয়ন আর বরাদ্দের টাকা লুটের অভিযোগ তোলে আওয়ামী লীগ। তিনি নির্বাচন বর্জন করলে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আসেন লাঙ্গলের বাবুল। সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসানও। প্রচারণার মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে শুরু হয় আক্রমণাত্মক বক্তব্য। এর মধ্যে চরমোনাইয়ের পির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ওপর হামলার অভিযোগে হাতপাখার প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেন। ফলে ভোটের প্রচারণার মাঠে মুখোমুখি হতে হয় নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর।
নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেন বাবুল। এমন সময় লাঙ্গলের প্রার্থী বাবুলের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিতর্কিত বেশকিছু অডিও-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এসব নিয়ে শুরু হয় নানা খিস্তিখেউর। সুযোগ নেয় আওয়ামী লীগ। আ.লীগ তাদের প্রচারণার মাঠে প্রচার করতে থাকে যিনি নিজেকে ও পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ, সামলাতে পারেন না, তিনি নগর ভবন, সিটি করপোরেশন সামলাবেন কীভাবে? তবে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের প্রচারণা, তৎপরতা থেকে নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান নিজেকে সংযত রাখেন।
এদিকে নৌকার পক্ষের লোকজনের আক্রমণাত্মক বক্তব্যে অনেকটা ধৈর্যহীন হয়ে পড়েন লাঙ্গলের প্রার্থী ও তাদের লোকজন। নৌকার প্রার্থীকে উড়ে এসে জুড়ে বসাসহ নানা আক্রমণ শুরু করেন তারাও।
লাঙ্গলের বাবুল পালটা জবাবে বক্তব্য দেন উদ্বেগের সঙ্গে। বলেন, আমাকে জেলে নেওয়া হোক; খুন, গুম করা হোক; তারপরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না। আমার ব্যাপারে একের পর এক অপপ্রচার রটানো হচ্ছে। মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। যারা নোংরা রাজনীতি করেন, এটা তাদেরই কাজ। আমার শেষ আহ্বান-আসুন নগরবাসী সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা ডুবাই। বাবুলের জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, নিত্যসঙ্গী আব্দুস শহীদ লস্কর বশির ব্যক্তি আনোয়ারুজ্জামানকে নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন।
অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন বয়কট করেছেন। জাকের পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম কর্মী সংকটে প্রচারে পিছিয়ে পড়ার কথা জানিয়েছেন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া, আব্দুল হানিফ কুটু, মোশতাক আহমদ রউফ মোস্তফা ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ছালাহ উদ্দিন রিমন ছোট পরিসরে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন।