ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রস্তুত বিশ্ব ইজতেমার ময়দান, উপস্থিত হবেন রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৪ ০২:৩৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

‘কহর দরিয়া’ খ্যাত গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার জন্য ময়দান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

 

মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক ইসলামি এ মহাসম্মেলনে যোগ দেবেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি।

ইজতেমাকে সফল করতে আয়োজকদের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাও গ্রহণ করেছে নানা ব্যবস্থা।

 

আয়োজকরা জানান, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার থেকেই সারাদেশ ও বিদেশ থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করবেন। এবার হয়তো মুসল্লিদের সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে।

 

জানা যায়, প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অংশ নেবেন মাওলানা যোবায়েরের অনুসারীরা। চার দিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীরা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। প্রথম পর্বে আগামী ২, ৩ ও ৪ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার আয়োজন করছেন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা এবং চার দিন বিরতি দিয়ে ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের আয়োজনে।

 

২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তাবলিগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী ও মাওলানা জুবায়ের আহমদের অনুসারীরা আলাদা হয়ে যান। এরপর থেকে তারা টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমা পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। এবছরও দুপক্ষ ২ পর্বে ইজতেমার আয়োজন করেছে।

 

শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে মাওলানা জুবায়েরেপন্থীদের ইজতেমা। আগত মুসল্লিরা জেলাওয়ারি খিত্তায় (তাঁবু) অবস্থান করবেন।

 

প্রতি বছরের মতো এবারও উর্দু ভাষায় বয়ান করা হবে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে বয়ানের সঙ্গে বাংলা ও আরবি ভাষায় তর্জমা করা হবে।

 

সরেজমিনে ইজতেমার ময়দান ঘুরে দেখা যায়, আগত মুসল্লিদের সুবিধার্তে তুরাগে এ বছর ছয়টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে পাঁচটি সেতু নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী ও একটি বিআইডব্লিউটিএ। এসব ব্রিজ দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে পারবেন।

 

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি উৎপাদন নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে। প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ময়দানের চাহিদা মোতাবেক ব্লিচিং পাউডার সরবরাহ ও ২৫টি ফগার মেশিনে মশক নিধনেরও ব্যবস্থা নিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন।

 

বরাবরের মতো এবারও বিদেশিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে আয়োজক কমিটি। দেখা যায়, বিদেশিদের আবাসস্থলে টিনের ছাপরা, শৌচাগার নির্মাণসহ ইজতেমায় আগত বিদেশি মুসল্লিদের জন্য ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে টিনের ছাউনি দিয়ে তার নিচে চটের ছাউনির প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। বিদেশি মেহমানদের উন্নত মানের অজু, গোসল ও বাথরুমের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের রান্নার জন্য সরবরাহ করা হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস।

বিশেষ করে বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পুরো ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়। নিরাপত্তার দিকে বিশেষ নজর দেয় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

 

আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিশ্ব ইজতেমার মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ানগুলো বিদেশিদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে শোনানোর ব্যবস্থাও থাকছে। বিদেশি ছাউনির পূর্ব পাশে তৈরি করা হয়েছে মূল বয়ান মঞ্চ। সুউচ্চ এ মঞ্চ থেকেই দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেমরা বয়ান পেশ করবেন। আর সেসব বয়ান বিভিন্ন ভাষায় তর্জমা করে প্রচার করা হবে এ মঞ্চ থেকেই।

 

মঞ্চের চারপাশে লাগানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ময়দানে মাইক ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

 

এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, এবারের বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় সাড়ে ৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। তুরাগে নৌ-টহলও থাকবে।

 

ইজতেমা ময়দানের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, দুই পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একাধিক প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য সার্বক্ষণিক ওই হাসপাতালসহ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে অন্তত ১৫টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন থাকবে।

 

উল্লেখ্য, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে ১৭টি বিশেষ ট্রেন চলবে। দুই পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন (৪ ফেব্রুয়ারি ও ১১ ফেব্রুয়ারি) সুবর্ণ, সোনার বাংলা, কক্সবাজার ও পর্যটক এক্সপ্রেস ছাড়া সব আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে তিন মিনিট করে যাত্রাবিরতি করবে। অর্থাৎ, এই দুদিন চারটি ট্রেন বাদে বাকি সব ট্রেন টঙ্গীতে থামবে। ইজতেমার মুসল্লিদের সুবিধার্থে দুপর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন বলাকা কমিউটার, বনলতা এক্সপ্রেস ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচলের সময় পরিবর্তন করা হবে। ইজতেমা উপলক্ষে সব আন্তঃনগর, মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল ট্রেনে যাত্রী চাহিদা ও প্রাপ্যতা সাপেক্ষে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হবে।