ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১

প্রায় এক যুগ পর ফিরলো ভারতে আটকে থাকা ছ'জন, আখাউড়া স্থলবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
আলপনা খাতুন, রিনা আক্তার, জিয়ারুল ইসলাম, মানিক মিয়া, জিয়ারুল ইসলাম এবং হানিফা আক্তার। তারা ছয়জনই ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন, এখন কিছুটা সুস্থ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা এই ছ'জন আটকা ছিলেন ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায়। প্রায় এক যুগ পরে তারা দেশে ফিরলেন, স্বজনরা ফিরে পেলেন তাদের হারানো আপনজনদেরকে।
 
 
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে তারা বাংলাদেশে আসেন। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চরকালি বাজাইল গ্রামের আলপনা খাতুন, ঢাকার কেরাণিগঞ্জের রিনা আক্তার, বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, জামালপুর জেলা সদরের নারিকেলি গ্রামের মানিক মিয়া, বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার জিয়ারুল ইসলাম এবং কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের ভাস্কর টিলা গ্রামের হানিফা আক্তারকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
 
 
ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনের সহযোগিতায় ওই ছয়জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।বৃহস্পতিবার বেলা একটায় আখাউড়া স্থলবন্দরের নো-ম্যান্স ল্যাণ্ডে ভারত থেকে তাদেরকে হস্তান্তরের সময় ভারতের ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারি কমিশনার কার্যালয়ের হাই কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, প্রথম সচিব মো. রেজাউল হক, প্রথম সচিব, দূতালয় প্রধান এস.এম. আসাদুজ্জামান সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলাম, আখাউড়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান, ইমিগ্রেশন পুলিশের ইনচার্জ মো. আব্দুল হামিদ, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রেগ্রাামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান, স্বেচ্ছাসেবক সৈয়দ খায়রুল আলম এবং প্রায় এক যুগ পর ভারত থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা।
 
 
একাধিক নথিপত্র সূত্রে জানা গেছে, ফেরত আসা ছয় বাংলাদেশিই মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ভারতের পশ্চিম ত্রিপুরা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হতে আটক হন। পরে তারা আদালতের নির্দেশে আগরতলার মর্ডান সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদের অনেকেই এই হাসপাতালে চার থেকে পাঁচ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাদেরকে দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মানব পাচারকারীদের দ্বারা পাচারের শিকার হওয়া আরো অনেক বাংলাদেশী আগরতলার মডার্ণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে আছেন বলেও জানা গেছে। 
 
 
দেশে ফেরত আসাদের একজন হানিফা আক্তারের ছেলে ইয়াছিন জানান, 'গত পাঁচ বছর আগে হঠাৎ করে আমাদোর মা হারিয়ে যান। তখন আমরা ভেবেছিলাম কোন আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। পরে নানাবাড়ি করিমগঞ্জ থানায় খোঁজ করি, কিন্তু পাইনি। গত মে মাসে পুলিশ খোঁজ নিতে বাড়িতে এলে জানতে পারি আমাদের মা। ভারতের আগরতলায় আছেন।' জিয়ারুলের আত্মীয় মোহাম্মদ রাজ্জাক জানান, 'বিগত ২০১৪ সালে আমার স্ত্রীর বোনের স্বামী জিয়ারুল নিখোঁজ হয়ে যান। সেই থেকে অনেক খুঁজেও আমরা তার হদিস পাইনি। তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। অনেক পরে জানতে পারি তিনি আগরতলায় আছেন। এমন একজন মানুষ কীভাবে ভারতে পাচার হলেন সেটা নিয়ে আমরাও বিস্মিত।' আলপনার চাচাত ভাই দুলাল জানান, 'বিগত ১০ বছর আগে হঠাৎ করে একদিন আমাদের বোন আলপনা নিখোঁজ হন। অনেক পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি আগরতলায় মানসিক হাসপাতালে আছেন।‌ কিন্তু কীভাবে তিনি সেখানে গেলেরন তা আমরা বুঝতে পারছি না।' কেরাণীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তাহের আলী বলেন, 'একটি আনন্দের ঘটনার সাক্ষী হতে এসেছি। বছর দুয়েক আগে খবর পাই রিনা আক্তার ভারতে আছেন। সেই থেকে প্রচেষ্টা চলমান। অবশেষে সরকারি উদ্যোগে আজ তাকে দেশে আনা হলো।' 
 
 
প্রায় এক যুগ ধরে ভারতে আটকে থাকার পর দেশে ফিরে আসা ছঢজনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে পাচারের শিকার ব্যক্তি-তাদের পরিবারবর্গকে জরুরি অর্থ সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয় বলে জানান, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান। তিনি বলেন, 'তারা কীভাবে সেখানে গেলো সে বিষয়টি নি:সন্দেহে ভাবনার। তারা পাচারের শিকার হয়েছেন বলেও তিনি ধারণা পোষণ করেন।