বগুড়ার শেরপুর টাউন পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মজির রহমান মজনু’র বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ একেএম নুরুল ইসলাম কে অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি গভর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির উল্লেখ করে শুক্রবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ। অন্যদিকে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ একেএম নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে কলেজের গভনিং বডির সদস্য উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক। এসময় কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলেজের বিভিন্ন খাত থেকে রশিদমূলে আদায়কৃত সাড়ে ১৯ লক্ষাধিক টাকা কলেজের ব্যাংক হিসেবে জমা না রেখে হাতে রাখার অভিযোগ সহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গভর্নিং বডির এক সভায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার একটি পত্র হাতে পান। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। গভর্নিং বডির সভাপতি বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম ঢাকতেই তিনি তাকে প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দিতে এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ইতিপূর্বে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় গাজীপুরে প্রেরণ করা সভাপতির বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১০ সালের ২৭ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত তার অনুগত আইসিটি প্রদর্শক মো: আব্দুল ওয়াহাব কর্তৃক দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা কলেজের তহবিল থেকে ব্যয় করার পর কিছু ভাউচার জমা করলেও সেই ভাউভার গুলোতেও হিসেবে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও সঠিক বিল ভ্উাচাল বিল জমা দেননি। কলেজের দখলকৃত জমি এককভাবে ক্রয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা কলেজ তহবিল থেকে গ্রহণ করেন। উক্ত ব্যয় গভর্নিং বডি কর্তৃক অনুমোদিত নয়। ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শিক্ষাবোর্ড ৪ লক্ষাধিক টাকা ফেরৎ দেয়। উক্ত টাকা যত সামান্য ফেরত দিয়ে অর্ধিকাংশ টাকা সভাপতি ও আব্দুল ওয়াহাব আত্মসাৎ করেছেন। ছাত্রীদের স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে ক্যাশে জমা দিয়ে ছাত্রীদের টাকা অত্মসাৎ করেছেন। কলেজের উত্তর ও পশ্চিম পাশে দোকানপাট বসিয়ে সভাপতি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়াও কলেজের বেঞ্চ নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আর এভাবে তিনি কলেজর আর্থিক ক্ষতিসাধন করে নিজে তা আত্মসাৎ করেই চলেছেন। এসব অপকর্মে সহযোগিতা না করায় সভাপতি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বরখাস্ত করেছেন বলে উল্লেখ করেন।
এ ছাড়া সভাপতি প্রতিনিয়ত অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়ে তার কাছে রেজুলেশন বাহি নেয়ার জন্য চাপ সৃস্টি ও হুমকী ধামকি দিয়ে চলেছেন। বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হওয়ায় গভর্নিং বডির সদস্যদের অবহিত করা হলেও তার ভয়ে সকলে নিশ্চুপ থাকেন। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তার জন্য থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে তিনি জানান।
শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরী মহিলা কলেজের গভনিং বডির সদস্য ও শিক্ষকবৃন্দ আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষের সাংবাদিক সম্মেলনের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ কলেজের বিভিন্ন সময়ে রশিদমূলে আদায়কৃত ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৭ টাকা কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে হাতে রেখেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি আড়াল করার জন্য সে কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। তিনি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কলেজের অর্থ আত্মসাত, সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি করায় গত ১০ জুলাই ২০১৯ তারিখে গভনিং বডির সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তার যোগদানের তারিখ ০৮-১১-২০১৮ থেকে ৩০-০৬-২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ৮ মাসের আর্থিক খাতের তদন্ত করে তদন্ত কমিটি দেখতে পায় সে আদায়কৃত টাকার মধ্যে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ২৪৯ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেছেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।