মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ায় বিএনপি’র পদযাত্রা কর্মসুচী নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি’র ব্যাপক সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। বিএনপি’র মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ হলে পুলিশ টিয়ারসেল, শর্টগানের রাবার গুলি ও লাঠিচার্জ করে। এতে পুলিশের এক পরিদর্শকসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর মধ্যে ৩ জন মহিলা পুলিশ রয়েছেন। পুলিশ এঘটনাকে বিএনপি’র মিছিল থেকে হামলা বলে উল্লেখ করে জানায়, নারী পুলিশও হামলা থেকে রক্ষা পায়নি। সংঘর্ষের সময় ১০জন পথচারী আহত হয় এবং একটি স্কুল বাসে বিএনপি’র মিছিল থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুর হয়। এতে স্কুল বাসের কাঁচ ভেঙ্গে জুমেইরা জুবায়ের(৮) নামের এক শিশু শিক্ষার্থী মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। অপরদিকে জেলা বিএনপি দাবি করেছে তাদের ৬০/৭০ জন নেতাকর্মী আহত হয়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষের সময় শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক ছাত্রী আতঙ্কে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তারা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়।
মঙ্গলবার বিএনপি’র পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন শোভাযাত্রা নিয়ে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন ও সতর্ক ছিলো। দুপুর বারোটার দিকে জেলা আওয়ামী লীগ শহীদ খোকন পার্কে সমাবেশ শেষে শহরে শান্তিপুর্ণ শোভাযাত্রা শেষ করে। অপর দিকে বিএনপি শহরের দুই প্রান্ত মাটিডালি ও বনানী এলাকা থেকে তাদের জেলা কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করে। জেলা পুলিশ জানিয়েছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে উভয়েই যেন শান্তিপুর্ণ ভাবে কর্মসুচী শেষ করতে পারে সে জন্য রুট নির্ধারণ করা হয়েছিলো। বিএনপি’র বনানী থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রা দুপুর সোয়া বারোটার দিকে শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড় এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ সেখানে বেরিকেড দিয়ে পুর্ব নিধারিত রুটে তাদের যেতে বলে। এসময় বেরিকেড ভাঙ্গতে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি বাঁধে। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর লাঠিসহ হামালা ও ইটপাকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ব্যাপক ইটপাটকেল ও ককটেল হামলার মুখে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে যায়। বিএনপি’র পদযাত্রার মিছিল থেকে ব্যাপক ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ একপর্যায়ে লাঠি চার্জ টিয়ারসেল ও ও শর্টগানের ছোররা গুলি ছোড়ে। বেশ কিছু সময় ধরে দু’পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষ চলে। এসময় মফিজ পাগলার মোড়ে একটি স্কুল বাস ভাংচুর ও এক শিশু শিক্ষার্থী আহত হয়। এছাড়া ককটেলের শব্দসহ সংঘর্ষের কারণে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তারা বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালের আরএমও ডাঃ খায়রুল বাশার মোমিন জানান, আতঙ্কের কারনে এসব ছাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ২৭ জন ছাত্রী ভর্তি হয়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে অনেকই চিকিৎসা নিয়ে ফিরে যান। এছাড়া ৮ জন পথচারী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। অপর দিকে ইয়াকুবিয়ার মোড়ে সংঘর্ষের পর দুপুর ১টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে নওয়াববাড়ি সড়কে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপি কার্যালয় থেকে নেতা কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় বগুড়া সদর ফাঁড়ির সেন্ট্রিবক্স তারা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। বিএনপি’র হামলার প্রতিবাদে যুবলীগ নেতাকর্মীরা শেরপুর রোড, সাতমাথা খোকন পার্ক এলাকায় বিক্ষোভ করে তবে পুলিশ তাদের এগুতে দেয়নি।
এব্যাপারে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, আলোচনা করে রুট নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তবে বিএনপি’র পদযাত্রা থেকে বিনা উস্কানীতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালান হয়। তিনি এধরনের হামলাকে ন্যাক্কারজনক হিসাবে উল্লেখ করে জানান, কেউ রাজনৈতিক কর্মসুচীর আড়ালে জনগনের জানমালের সম্পদ নষ্ট করলে পুলিশ তা হতে দিবে না। পুলিশের স্থাপনার ওপর হামলা কোন রাজনৈতিক কর্মসুচী হতে পারে না। তিনি জানান পুলিশের ওপর নির্দয় ভাবে হামলা করা হয়েছে। এবিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বগুড়া জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা জানান, সব কিছু পুলিশের কথা মতো চলবে না, পুলিশ তাদের পদযাত্রায় হামলা ও গুলি চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করেছে বলে দাবি করেন। এর মধ্যে ৬০/৭০ জন চিকিৎসা নিয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।