বাইরের দেশ থেকে চেসিস আমদানি করে পরীক্ষামূলকভাবে নিজেরাই বাস তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব কারখানায় দক্ষ কারিগরদের ব্যবহার করে মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে বাস নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আপাতত দুটি বাস তৈরি করা হবে। সফল হলে, এই প্রকল্প বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম দৈনিক বায়ান্ন বলেন, ‘আমরা আমদানির তুলনায় অনেক কম খরচে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো মানের বাস নির্মাণে সক্ষম। দেশের কারখানায় তৈরি একটি বাসে আমদানির তুলনায় প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে’।
তিনি আরও জানান, ‘বাইরে থেকে বাস আমদানিতে প্রায় ৩-৪ বছর সময় লাগে এবং খরচ হয় সোয়া ১ কোটি টাকা। দেশেই একই মানের বাস ৯০ লাখ টাকায় তৈরি করা সম্ভব’।
চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, গাজীপুর ওয়ার্কশপে বাস তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আশা করছেন, দেশে তৈরি বাস অন্তত ১৮ বছর টেকসই হবে। যেখানে আমদানি করা বাস ৩-৪ বছরের মধ্যেই নানা সমস্যায় পড়তে দেখা যায়।
তাজুল ইসলাম জানান, ‘বিআরটিসি এখন নিজেদের আয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তিন বছর আগে বিআরটিসির মাসিক আয় ছিল ৩২ লাখ টাকার নিচে। এখন এই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ লাখ টাকার বেশি। আগে যেখানে স্টাফদের বেতন দিতে ঘাটতি হতো, এখন মাস শেষ হওয়ার তিন দিনের মধ্যেই সবার বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। মাসিক বেতন খরচ সাড়ে ১২ কোটি টাকার বেশি হলেও, আমরা সঠিক সময়ে তা দিতে পারছি’, বলেন তিনি।
চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, বিআরটিসি প্রতি বছর ৩০-৪০টি বাস নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের ঐক্য ও কর্মচারীদের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তেজগাঁওয়ের বিআরটিসি কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারিগররা পুরনো বাস মেরামত ও সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজ করছেন। স্টোর রুমে ১ কোটি ১৮ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ মজুত রয়েছে, যা বাস নির্মাণ ও মেরামতে ব্যবহৃত হচ্ছে। আসন্ন বিজয় দিবসে গাজীপুর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিআরটি লেনে ১০টি বাস চলাচলের জন্য প্রস্তুতি চলছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘পরীক্ষামূলক বাস নির্মাণ সফল হলে, আমরা কমপক্ষে ১০টি বাস নিজেদের আয়ে তৈরি করতে পারব। এগুলো বানাতে সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘বিআরটিসি শুধু পরিবহনের মাধ্যম নয়; সংকট মোকাবেলায় এটি একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিমানবন্দর, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে আমাদের বাস চলছে, যা জনগণের চাহিদা পূরণ করছে’।
চেয়ারম্যানের প্রত্যাশা, বিআরটিসি ভবিষ্যতে দেশের পরিবহন খাতে আরও বড় অবদান রাখতে পারবে এবং জনগণের সেবায় নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করবে।
পরিশেষে বলা যায়, বিআরটিসি'র উদ্যোগটি শুধু একটি বাস নির্মাণ প্রকল্প নয় বরং এটি আত্মনির্ভরশীলতার একটি দৃষ্টান্ত। সাশ্রয়ী, টেকসই এবং মানসম্মত বাস নির্মাণে এই প্রকল্প সফল হলে, দেশীয় পরিবহন ব্যবস্থায় একটি নতুন যুগের সূচনা হবে।
বায়ান্ন/এমএমএল/এএস/একে