বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রতিটি পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার আহবান জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি।
মঙ্গলবার সিলেট জেলা ও মাহনগর বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এমন আহ্বান জানানো হয়।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকালে হাসিনা সরকার পতনের পর আনন্দ উদযাপন করতে সিলেটের রাস্তায় নেমে আসেন নানাশ্রেণীপেশার মানুষ। কিন্তু সেসব মিছিল থেকে একসময় শুরু হয়ে যায় সিলেট মহানগরজুড়ে তাণ্ডব।
সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। এ অবস্থা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গবার (৬ আগস্ট) বিকালে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কোনো নেতাকর্মী এসব অপকর্মে জড়িত নন বলে দাবি করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন- ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিলো। আর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রম এবং টানা ৩৬ দিনের ছাত্রজনতার রক্তদেওয়া আন্দোলনের পর গতকাল (৫ আগস্ট) আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ছাত্রসহ দেশের ১৮ কোটি জনতার প্রতি।
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন- আমরা গভীরভাবে শ্রদ্ধা জানাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ
সিলেটের সাংবাদিক এটিএম তোরাবসহ শাহাদাত বরণকারী চার সাংবাদিকের প্রতি। এ আন্দোলনে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় একদিনেই ৬ জন শাহাদাত বরণ করেছেন। তাছাড়া
সিলেটসহ সারাদেশে শত শত মানুষ নিজের প্রাণ বিষর্জন দিয়েছেন। তাদের সকলের সকলেই এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কাইয়ুম চৌধুরী রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনেদ আহমদ, আনসার আলীসহ যেসকল নেতাকর্মীরা গুম হয়েছেন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি দীর্ঘ ১৫ বছরে দলের যেসব নেতাকর্মী ও ছাত্রজনতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অভিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন- জনতার বিজয় উৎসবে স্বৈরাচার সরকারের কিছু দোসর অত্যন্ত সুকৌশলে প্রবেশ করে
সিলেট শহরে বিচ্ছিন্নভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। তাদের সাথে বিএনপি কিংবা ছাত্র-জনতার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করার পর-পরই সিলেট বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী ও ড. এনামুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরজুড়ে মাইকিং করা হয়েছে এবং কোথাও কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করালে তাদেরকে সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কোনো তৃতীয় পক্ষ যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য আহবান জানিয়েছে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বঙ্গভবনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের রাষ্ট্রপতি বৈঠক করেছেন। সে বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ অতিশীঘ্রই আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিজ জন্মভূমিতে ফিরবেন। আমাদের দল যত দ্রুত সম্ভব পরবর্তী কর্মসূচি বা করনীয় নির্ধারণ করবে। সে পর্যন্ত বিএনপি ও সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সর্বস্থরের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারন করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার আহবান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমার আশঙ্কা করছি যে, আওয়ামীলীগের দোসররা দেশে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সহ যেকোন অরাজক পরিস্থিতির সৃস্টি করতে পারে। তাই আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানাচ্ছি।
বিএনপি সভাপতি বলেন, সর্বোপরি এই বিজয় কারো একার নয়, এই বিজয় গণতন্ত্রের, এই বিজয় বাকস্বাধীনতার, এই বিজয়া ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ায়, এই বিজয় মুক্তিকামী ছাত্রজনতার, এই বিজয় ১৮ কোটি নিপীড়িত বাংলাদেশীর। সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা।
সংবাদ সম্মেলনে ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদি, আরিফুল হক চৌধুরী, ড. এনামুল হক চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামিম ও আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিপি সামিয়া বেগম চৌধুরী, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিফতাহ সিদ্দীকি, জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ আহমদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল গফফার।