ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় গফরগাঁও সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইমরান হোছেইনের বিরুদ্ধে ভুয়া ভাউচার তৈরী করে শিক্ষকদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার পদত্যাগের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কলেজ শিক্ষক শওকত আলী। তিনি ৩৫ তম বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা এবং গফরগাঁও সরকারি কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক।
গত শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকে নিজ বিভাগের অফিস-রুমের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের শিক্ষক (৩৫তম বিসিএস) শওকত আলী। পরে রাতে তার ব্যক্তিগত আইডি থেকে ফেসবুক লাইভে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের বর্ণনা তুলে ধরে পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
শওকত আলী অভিযোগ করে বলেন বিভিন্ন সময় কলেজের ব্যয়ের বিবরণী সহ জাতীয় দিবস গুলোকে কেন্দ্র করে নানা ভাউচার তৈরী করে শিক্ষকদের কাছ থেকে মেন্টাল টর্চারের মাধ্যমে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় অধ্যক্ষ। যার মধ্যে রয়েছে, মানবতাবাদী সংগঠন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ট্রেনিং ফি, সামাজিক কাজের জন্য ব্লাডগ্রুপিং ক্যাম্প, এসি আরের দোহাই, এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান, মিলাদ ও ধর্মীয় ফান্ড,
তার পরিবেশিত লাইভ এর তথ্যে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ট্রেনিং ফ্রি পাব ভাউচার তৈরি করে উত্তোলন করা হয় ২৭৬৫০ টাকা যার প্রকৃত খরচ ১১ হাজার টাকা, অধ্যক্ষের কাছে ১৬৬৫০ টাকা, তবে ৪০% জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেননি। গত ১৬ জুন ২০২৪ আলিফ হাসপাতাল ও গফরগাঁও গ্রন্থ কুটির আয়োজিত ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পিং বাবদ উত্তোলন করা হয় ১৫ হাজার টাকা মূল খরচ ৪৪০০ টাকা, আত্মসাৎ করেছেন ১০৬০০ টাকা। ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ প্রথমে ২০ হাজার পরে ৪০ হাজার টাকাসহ মোটা ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করা, যেখানে খরচ দেখানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
তবে ডিগ্রী পরীক্ষার কমিটি গঠন এবং প্রতি অডিটে ১০% ফেস করতে হয়। তিনি বলেন অধ্যক্ষ যদি সৎ হবেন তাহলে অডিট ১০% কেন দিতে হবে।
শওকত আলী আরো বলেন, বাংলাদেশে ছাত্রজনতার গনঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে তিনি নিজেকে রাতারাতি ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন বলে দাবী করছেন।
গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ইমরান হোছেইন জানান , ব্যক্তিগত আক্রোশের কারনে তিনি আমার বিরুদ্ধে এ-ই অভিযোগ করেছেন, তিনি আরো বলেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আমি দোষী হলে আমরা আলোচনা করে সমাধান করতে পারতাম। এবিষয়ে আন্দোলন বন্ধ করে আলোচনা এবং তার প্রতি আস্থাশীল হওয়ার জন্য আহ্বান জানান ড. ইমরান হোসেইন।
তবে অতীতে কোন রাজনীতিতে জড়িত থাকার ব্যপারে অস্বীকার করেছেন তিনি।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সাথে কথা বলে জানা গেছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি তবে দপ্তরে এব্যপারে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে টানা তিনদিন অবস্থানরত গফরগাঁও সরকারি কলেজের ইসলামী স্ট্যাডি বিভাগের শিক্ষক ও ৩৫তম বিসিএসের শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী জানান অধ্যক্ষের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন।
গত শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে ফেসবুক লাইভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় পরদিন শনিবার থেকে গফরগাঁও সরকারি কলেজের শত শত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে থাকে। পরে শিক্ষক অধ্যক্ষকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে ডঃ মুহাম্মদ ইমরান হোসেনের দাবিতে শওকত আলীর অবস্থান কর্মসূচির পক্ষে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।