ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ঠা আশ্বিন ১৪৩১
ফাষ্ট ক্লাস পৌরসভার থার্ডক্লাস নাগরিক জীবন!

মজবুত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে জলাবদ্ধতায় ডুবে যায় ঝিনাইদহ শহর

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:২০:০০ অপরাহ্ন | খুলনা

প্রতিষ্ঠার ৬৬ বছর পার হলেও ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় মজবুত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে অপরিকল্পিত ড্রেন মহল্লাবাসির জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই পাড়া মহল্লা তলিয়ে যায় পানির নিচে। শহরের ছোট বড় সব খাল, পুকুর ও নালা ভরাট করে বহুতল ভবন তৈরী করা হয়েছে। তাই পানি বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই। তাবে নাগরিকদের একমাত্র পৌরসভার ড্রেন ভরসা হলেও ৮০ ভাগ ড্রেনের কোন মাথামুন্ডু নেই। ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকে রাজনৈতিক দলের নেতারা ঝিনাইদহ পৌরসভার চেয়ারম্যান বা মেয়র নির্বাচিত হলেও তারা শক্তিশালী ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেননি। অথচ ড্রেন নির্মানের নামে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা লোপাট করা হয় এমন কথাও ক্ষোভের সঙ্গে পৌরবাসির বলতে শোনা যায়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ১৯৫৮ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভা গঠিত হয়। এ পর্যন্ত ১৪ জন রাজনৈতিক নেতা চেয়ারম্যান ও মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু পরিকল্পিত ড্রেন উন্নয়নে কেউ কার্যকর ভুমিকা পালন করেননি বলে অভিযোগ। প্রথম শ্রেনীর ঝিনাইদহ পৌরসভার মোট আয়তন ৩২.৪২ বর্গ কিলোমটিার। ২৬টি মৌজা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ পৌরসভায় তিন লাখ পরিবার বসবাস করেন।

পৌরসভার তথ্য বাতায়ন সুত্রে জানা গেছে, চলাচলের জন্য পৌর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা কাচা রয়েছে। সুত্রমতে ঝিনাইদহ শহরে ৭২.৩০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। অন্যদিকে কাচা রাস্তা আছে ৭৪.৬১ কিলোমিটার। হাল আমলে কাচা-পাকা ড্রেনের কোন পরিসংখ্যান পৌরসভায় না থাকলেও পুরাতন তথ্য বলছে ঝিনাইদহ শহরে ১০৭ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে। এরমধ্যে পাইপ ড্রেন আছে ৭ কিলোমিটার, ইটের ড্রেন ৩৫ কিলোমিটার, আরসিসি ১৫ কিলোমিটার, প্রাইমারি ১০ কিলোমিটার ও কাচা ড্রেন ৪০ কিলোমিটার।

ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়ার বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান জানান, ব্যাপারীপাড়ার ড্রেনগুলোতে কোন প্রবাহ নেই। নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না। অনেক স্থানে ড্রেন ভেঙ্গে সমান হয়ে গেছে। ফলে বাসাবাড়ির পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে ড্রেনের ময়লা আবর্জনা ভেসে মহল্লা একাকার হয়ে যায়। তিনি অভিযোগ করেন কোন রকম পরিকল্পনা ছাড়াই পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। ফলে পৌর নাগরিকদের জলাবদ্ধতা থেকে কোন নিস্কৃতি নেই।

পাগলাকানাই এলাকার বাসিন্দা আরিফ বিল্লাহ জানান, অগ্নিবীনা সড়ক থেকে পাগলাকানাই ও চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড এলাকার ড্রেনের কোন মাথামুন্ডু নেই। বাসাবাড়ির পানি কোথায় গিয়ে পড়বে সেই ব্যবস্থা ড্রেনে রাখা হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। উপ-শহরপাড়ার বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, শহরের কোরাপাড়া এলাকায় একটি খাল ছিল। পাড়া মহল্লার পানি ওই খাল দিয়ে হামদহ হয়ে বৃষ্টির পানি নবগঙ্গা নদীতে পড়তো। কিন্তু সেই খাল ভরাট করে বাড়িঘর তৈরী করা হয়েছে। ফলে কোর্টপাড়া, পাগলাকানাই, ব্যাপারীপাড়া, উপ-শহরপাড়া, হামদহ, ট্রাক টার্মিনালপাড়া ও কোরাপাড়ার পানি বের হওয়ার কোন পথ নেই। শহরের প্রধান ড্রেনটির সঙ্গে পাড়ামহল্লার ড্রেনের সংযোগ না থাকায় গোটা পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা লেজেগোবরে দশার সৃষ্টি হয়েছে। আদর্শপাড়া, কচাতলার মোড়, মহিলা কলেজপাড়া, কাঞ্চননগর, কলাবাগান, চাকলাপাড়া ও খোদ ঝিনাইদহ শহরের পোস্ট  অফিস মোড়েও অল্প বৃষ্টিতে সাঁতার পানি হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুল ইসলাম মধু জানান, বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন আরসিসি ড্রেন তৈরী হচ্ছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি।

ঝিনাইদহ পৌর সভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় এলজিএসপি ও পাবলিক হেলথ এর দুইটি প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি প্রধান আরসিসি ড্রেন তৈরী হলে সব সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়া বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ২৫ শহর প্রকল্পের আওতায় ছোট বড় ১৮ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে শহরে আর কোন জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে নির্বাহী প্রকৌশলী মনে করেন।