মা শব্দের সমার্থক বা প্রতিশব্দ হলো- জননী, মাতা, প্রসূতি, গর্ভধারিণী, আম্মা, আম্মু, আম্মাজান, আম্মী, মাতৃ, জন্মদাত্রী, জনিকা, প্রজায়িনী, প্রজনিকা। গর্ভধারিণী মা ছাড়াও আরও মা রয়েছে, যেমন- ধাত্রী মা, দাই মা ও পালক মা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মা হলো- দেশমাতা বা দেশ মা তথা ধরিত্রী মা। তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের কথায়- “ ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা। তোমাতে বিশ্বময়ী বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরও বলেছেন, ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ স্বরূপ।’
গত সোমবার জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা পলাশতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর নবীন শিক্ষার্থীদের বরণসহ এসএসসি-২০২৪ পরীক্ষার্থীদের বিদায় উপলক্ষে বার্ষিক মিলাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান দুলাল মাস্টারের সভাপতিত্বে আলোচনা শুরু হয়। প্রথমেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন। এরপর সহকারী শিক্ষক (গণিত) দেলোয়ার হোসেন ইংরেজিতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন। হয়তো তিনি মাতৃভাষার গুরুত্ব বুঝেন না। নতুবা তিনি মাতৃভাষা বাংলাকে অবহেলা করে ইংরেজিতে বক্তৃতা দেয়ার মধ্যে নিজের পান্ডিত্য জাহির করছেন। সেই সাথে মাতৃভাষার প্রতি অসম্মান দেখিয়ে বিদেশী ভাষা বা ইংরেজি ভাষাকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। মাতৃভাষার অসম্মান মানেই মায়ের প্রতি অসম্মান। প্রধান অতিথি সাবেক প্রধান শিক্ষক শামছুল হক মাস্টার, বিশেষ অতিথি অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক ঈমান আলী মাস্টার বিদায়ী পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি ও অভিভাবক আয়নাল হক, অভিভাবক সদস্য নাজমুল হক তোতা, ডা. সফিকুল ইসলাম ও বিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক মাস্টার প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য বাঙালি জাতি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জীবন দিয়ে বিশ্বে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তাই বাংলা ভাষা শুধু এ দেশের মাতৃভাষাই নয় বরং রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবেও স্বীকৃত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। সেই সাথে জাতিসংঘের দপ্তরেও স্থান অধিকার করেছে। তাই ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষক (গণিত) দেলোয়ার হোসেন ইংরেজিতে বক্তৃতা দেয়ায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সচেতন মহল ওই শিক্ষকের মাতৃভাষার প্রতি চরম অনীহা, অবজ্ঞা বা অসম্মানের মতো এহেন কান্ডের তীব্র নিন্দাসহ জোরালো প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে মহলটি শিক্ষা বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিসহ প্রশাসনের নিকট এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ মাতৃভাষার অসম্মানে স্পর্ধা না দেখাতে পারে।