বাংলাদেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ পাম্প বিকাল হয়ে এর কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলায় পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা জেলার ক্যানেল এর মাধ্যমে কৃষককে পানি সরবরাহ করে আসছিলো পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় সামান্য কিছু পানি সরবরাহ করতে পারছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
২০২৪ সালের প্রথমদিকে সেচ প্রকল্পের সবকয়টি পাম্প নষ্ট হলে পানি সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে কৃষকেরা পরে চরম বিপাকে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পরে একটি মাত্র পাম কোনরকম মেরামত করা হয়। বর্তমানে পদ্মা নদীর পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সকল একটি পাম্প কাজে আসছে না। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক জেলার ফসল উৎপাদন।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ৬০ দশকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার পদ্মা নদীর পাশে তৈরি গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হতো। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলার সেচের জন্য পানি সরবরাহ করা হতো।
এখন কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় জেলায় মাত্র ৩০-৪০ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাচ্ছে কৃষকরা। বছর খানেক আগে দুটি সেচ পাম্প নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি। আবার শুস্ক মৌসুমে পদ্মার পানি স্তর নেমে যাওয়ায় সচল একটি পাম্প কাজে আসছে না। আগে বিঘা প্রতি ২৮০ টাকার বছর জুড়ে সেচ সুবিধা পেলেও এখন বড় সংকটের মধ্যে দিন যাপন করতে হচ্ছে কৃষকদের।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, জেলার মাঠে এখন ধান, পেঁয়াজ, গম, ভুট্টা, তামাক সহ অনেক ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে। সময় মত বানিয়ে না পেলে ফসল উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হবে। বোরিং এর মাধ্যমে পানি নিতে খরচ অনেক বেশিই হচ্ছে। কেনালে সরকারি পানি পেলে এই খরচ এক ভাগে নেমে আসতো। পানি না পাওয়ার কারণে কৃষকের খরচ অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
এ বিষয়ে পাম্প হাউজ ভেড়ামারা নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, দুইটি বিকল হওয়া পাম্পের মধ্যে একটি পাম্প ২০২১ সালে জাপানি মেকানিকদের সাথে চুক্তি হয়েছিল এবং কাজগুলো ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। বর্তমানে এটি চলমান রয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে নষ্ট হওয়া পাম্পটি সংস্কার করে চালু করা সম্ভব হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মরফলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, এ বছর পানির উচ্চতা ৪ পয়েন্টের উপরে থাকলে একটি সেচ পাম্প জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চালানো সম্ভব হবে।
জিকে ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাফায়েত হোসেন পল্টু বলেন, ৬০ দশকের বিভিন্ন জায়গায় ক্যানেল ভরাট ও দখল হয়েছে গেছে। অতি সত্তর যদি কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ না নেয় তাহলে কৃষকরা আগামী দিনে সেচ চালু হলেও পানি নিয়ে সমস্যায় ভুগতে পারেন।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ