ঢাকা, শুক্রবার ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১লা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মৌলভীবাজারে ১০১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : বুধবার ২২ জুন ২০২২ ০২:৫৬:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

মৌলভীবাজার অংশে কুশিয়ারা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল। তবে নদীর তীররক্ষা বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ থামছে না। ফলে জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের আড়াই হাজার পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

গত শুক্রবার থেকে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম ও শেরপুর নৌবন্দর এলাকার মসজিদের পাশ দিয়ে বাঁধ উপচে কুশিয়ারা থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ শুরু হয়। এরপর আরও একাধিক পয়েন্ট দিয়ে নতুনবস্তি, ব্রাহ্মণগ্রাম, শেরপুর বাজার, দাউদপুর, আইনপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করতে থাকে।

এখনও লোকালয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ এলাকার আশ্রয়কেন্দ্র আজাদ বখত স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও দাউদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিচতলা জলমগ্ন হওয়ায় এখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলায় আশ্রয় নেওয়া প্রায় দুইশ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না ঠিকমতো। ফলে বাড়ছে ক্ষুধার জ্বালা, বাড়ছে হাহাকার। সরকারি সহায়তায় ভুক্তভোগী অর্ধেক মানুষকেও ত্রাণের চাল দিতে পারছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বানভাসিদের মধ্যে।

সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু আহমদ বলেন, খলিলপুর ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের কমপক্ষে এক হাজার বানভাসি পরিবারের মানুষ ত্রাণ পাওয়ার উপযুক্ত। তার মধ্যে ৪৮০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

সদর উপজেলার খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী বলেন, উপজেলা পরিষদ থেকে ৮ টন চাল বরাদ্দ পেয়ে বন্যা উপদ্রুত তিনটি ওয়ার্ডকে অগ্রাধিকার দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এসব পরিবারের দুই লাখ ২০ হাজার মানুষ হয় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন, নয়তো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে কিংবা নিজ ঘরে মাচা বেঁধে বসবাস করছেন। জেলায় ১০১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ২৪ হাজার ঘরবাড়িছাড়া মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫শ গবাদি পশুকে স্থান দেওয়া হয়েছে।

রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাস বলেন, এ ইউনিয়নের কমপক্ষে ১২টি গ্রামের ২৫শ পরিবারের মানুষ জলের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সদর উপজেলার খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইকুঁড়া, রাজনগরের ফতেপুর, উত্তরভাগ, জুড়ী ও বড়লেখার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। মনু ও ধলাই নদীর পানি কমায় রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার পানি কমছে। ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ৬০টি মেডিকেল টিমের বিভিন্ন দল বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে। মেডিকেল টিমের সদস্যরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বানভাসি মানুষের মধ্যে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, 'উজানের ঢল কমে এলে আমাদের এলাকার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।'