![](https://dainikbayanno.com/storage/whatsapp-2025-02-12-at-13.jpg)
রাজধানীর তিনটি এলাকায় র্যাব ও ডিজিএফআই পরিচালিত ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত কুখ্যাত টর্চারসেল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় সেখানে আগে আটক ও নির্যাতনের শিকার হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নিজেদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা আজ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রথমে রাজধানীর উত্তরা, পরে মিরপুর ও রমনার তিনটি স্থানে আয়নাঘর পরিদর্শনে যান। তার সঙ্গে ছিলেন সরকারের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও নির্যাতনের শিকার কয়েকজন ব্যক্তি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানান, গত বছরের জুলাই মাসে তাকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গোপন স্থানে আটকে রাখে। দীর্ঘদিন অজ্ঞাত স্থানে রাখার পর তাকে এই টর্চারসেলে নেওয়া হয়। আজ সেখানে গিয়ে তিনি কক্ষটি শনাক্ত করেন এবং বলেন, "এই কক্ষের একপাশে টয়লেটের মতো একটি বেসিন ছিল, যেখানে হাত-মুখ ধোয়ার অনুমতি দেওয়া হতো না। এখানে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।"
তিনি আরও জানান, গত ৫ আগস্টের পর এই সেলগুলোর মাঝের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয় এবং দেয়ালের রং পরিবর্তন করা হয়। পরিদর্শনের সময় তিনি বলেন, "কক্ষের প্রতিটি ইঞ্চির সঙ্গে আমার যন্ত্রণার স্মৃতি জড়িয়ে আছে।"
এদিকে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও একইভাবে সাদা পোশাকধারীদের হাতে তুলে নেওয়ার শিকার হন। আজ টর্চারসেল পরিদর্শনকালে তিনি কক্ষটি চিনতে পেরে বলেন, "আমি নিশ্চিত, আমাকে এই কক্ষেই আটকে রাখা হয়েছিল। দেয়ালের উপরের অংশে খোপগুলোর মধ্যে এক্সস্ট ফ্যান ছিল, যা ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করত। আলো-বাতাসের অভাব, দমবন্ধ করা পরিস্থিতি আর অব্যাহত নির্যাতনে দিনের হিসাব হারিয়ে ফেলেছিলাম।"
উল্লেখ্য, এসব আয়নাঘরে আটকদের চোখ বাঁধা অবস্থায় দিনের পর দিন রাখা হতো। একটানা নির্যাতন চালিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের এসব স্থান যারা তৈরি করেছে, যারা এখানে নির্যাতন চালিয়েছে, তাদের বিচার করা হবে। স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নির্যাতিতদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হবে।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো গোপন নির্যাতনকেন্দ্র থাকবে না। যারা এই অপরাধে জড়িত, তারা ছাড় পাবে না।"
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, "প্রধান উপদেষ্টা আজ রাজধানীর তিনটি গোপন নির্যাতনকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড বন্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।"
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই পরিদর্শন শুধু প্রতীকী নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের ভয়াবহ দিক উন্মোচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরকারের উচ্চপর্যায়ের কেউ এসব টর্চারসেল পরিদর্শন করলেন, যা বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করছেন।
বায়ান্ন/এএস/পিএইচ