ঢাকা, শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শান্তিগঞ্জে চেয়ারম্যান মাসুক মিয়ার বিরুদ্ধে ১১ সদস্যের অনাস্থা

কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ, সুনামগঞ্জ | প্রকাশের সময় : রবিবার ৩০ অক্টোবর ২০২২ ১১:০৪:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের  ‘চিকারকান্দি আগার বাড়ির রাস্তা হইতে বেড়িবাঁধের মুখ পর্যন্ত মাটি ভড়াট করে রাস্তা নির্মাণ’ প্রকল্পের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় (২য় পর্যায়) ৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকার বরাদ্দ আসে। ৬নং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি  (পিআইসি) ধারদেনা করে কাজটি সম্পন্নও করায়। বরাদ্দের অর্থ যখন অনুমোদিত হয়ে আসে তখন টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে বোকা বনে যান প্রকল্পের সভাপতি, ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য কোহিনূর বেগম৷ প্রকল্পের ওই টাকা প্রভাব খাটিয়ে ইতোপূর্বে উত্তোলন করে নিয়েছেন তাদেরই চেয়ারম্যান (পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদ) মাসুক মিয়া। এছাড়াও অন্যান্য সব বরাদ্দের অর্থ ইচ্ছেমতো খরচ করা, পরিষদের সকল সদস্যদের সাথে অসদাচরণ, বিভিন্ন অনিয়ম সম্পর্কে পরিষদের সদস্যগণ জানতে চাইলে তাদের সাথে তর্জন-গর্জন, অশালীন ভাষায় গালিগালাজ, মেয়াদকালীন সময় কোনো বরাদ্দ না দিয়ে আঙুল চুষানোর হুমকি, এক মহিলা সদস্যের চরিত্র নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য,  এমনকি বেশি কথা বললে ছিংলা (বাঁশের ছোট লাটিকে স্থানীয় ভাষায় চিংলা বলা হয়) বা ‘গল্লা’ দিয়ে পিটিয়ে পরিষদ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকির মতো অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বর্তমান এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এজন্য তারা ইউনিয়নের এ চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে। বৃহস্পতিবার বিকাল আড়াই টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামানের কাছে এমন সব বিস্তর অভিযোগ এনে ইউনিয়ন পরিষদের ১১জন পুরষ ও নারী সদস্যদের সিল-স্বাক্ষরিত অভিযোগ ও অনাস্থা পত্র জমা দেন। অভিযোগ পত্রে সদয় অবগতির জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বরাবরে অনুলিপি পাঠানো হয়। পরে একই দিনে শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের অস্থায়ী কার্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে উপস্থিত হয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযোগকারী ১১ ইউপি সদস্য-সদস্যাগণ। এসময় সাংবাদিকদের সামনে তাদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউপির ২নং ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন- ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য কোহিনূর বেগম, ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ছুরতুন নেছা ও ৩ নং ওয়ার্ডের সদস্য আমির আলী।
 
তারা তাদের লিখিত বক্তব্যে বলেন, পূর্ব পাগলা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি আমরা ইউপি সদ্যস্যগনের সহিত কোনরুপ সমন্বয় ছাড়াই তাহার একক সিদ্ধান্তে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। উনার ক্ষমতা ও দাপটের কাছে আমরা ইউপি সদস্যগন সবসময়ই উপেক্ষিত ও অবমূল্যায়িত হয়ে আসছি। বিগত ২০২১-২০২২ইং অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় (২য় পর্যায়) ৩২জন শ্রমিক দ্বারা ৬নং পিআইসি মোট ৫,১২,০০০/- (পাঁচ লক্ষ বারো হাজার) টাকা বরাদ্ধে “চিকারকান্দি আগার বাড়ির রাস্তা হইতে বেড়িবাধের মুখ পর্যন্ত মাঠি ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ' প্রকল্পের কাজ বিগত মে-জুন মাসে ১,২,৩নং (সংরক্ষিত) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম প্রকল্প সভাপতি ও আবুল কাশেম সেক্রেটারি থাকিয়া কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু উক্ত প্রকল্পে বরাদ্ধকৃত টাকা চেয়ারম্যান ক্ষমতার অপব্যাবহার প্রয়োগের মাধ্যমে নিজে উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করিয়াছেন । প্রকল্পের কাজ সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার পর প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম প্রকলল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসে বিল ছাড়করণের জন্য যোগাযোগ করিলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ জানান যে উক্ত প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক মিয়ার নিকট দেওয়া হয়েছে। বিগত ৫মাস যাবত ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম প্রকল্পের টাকা পাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করিলেও চেয়ারম্যান তাহার প্রাপ্য টাকা না দিয়া উপরুন্তু বিভন্ন ধরণের হুমকি ধামকি প্রদর্শন করেন বিগত ২৩/১০/২০২২ইং তারিখে সকল ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে ইউপি কার্যালয়ে ইউপি সদস্য কোহিনুর বেগম তাহার প্রাপ্য টাকা চেয়ারম্যান সাহেবের নিকট চাহিলে চেয়ারম্যান উনার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উনার চরিত্র নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও অশালিন ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং উনাকে অফিস থেকে চলে যেতে বলেন। আমরা উপস্থিত সকল ইউপি সদস্যগন চেয়ারম্যান সাহেবকে শান্ত করিতে চাহিলে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে টেবিল চাপড়িয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালজ করিয়া উনার ক্ষমতার দাপট ও স্বেচ্ছাচারিতা স্বভাবজাত বৈশিষ্ঠ্য তুলে ধরেন। ২০২১-২০২২ইং অর্থ বছরে মাননীয় জেলা প্রসাশক সুনামগঞ্জ এর কার্যালয় হইতে বিশেষ সহায়তা তহবিলের দরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থনের জন্য ৮টি সেলাই মেশিন এবং ২০২২-২০২৩ইং অর্থবছরে ইউনিসেফ কর্তৃক উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ১টি নলকূপ ও ৫টি ল্যাট্রিন বরাদ্ধ করা হলে উক্ত বরাদ্ধ চেয়ারম্যান কোথায় এবং কাদেরকে বিতরণ করেছেন আমরা ইউপি সদস্যগণ তাহা অবগত নহে। এ ব্যাপারেও বিগত ২৩/১০/২০২২ইং তারিখে উনার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি রাগান্বিত স্বরে বলেন যে, তিনি কাউকে কইফিয়ত দেন না। চেয়ারম্যানের অনিয়মিত এবং বিলম্বে অফিসে আসার কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ায় এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলেন এটা উনার ব্যাক্তিগত ব্যাপার, ভালো লাগলে অফিসে আসবেন না লাগলে আসবেন না। আমার মনে যা চায় তাই করব এবং তোদেরকেও দেখে নিব বলে আমরা সকল ইউপি সদস্যকে হুমকি দেন। এমতাবস্তায় আমরা একজন স্বেচ্ছাচারি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎকারী, দুর্নিতীবাজ ও আত্ম অহংকারী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ সহ অনাস্থা প্রস্তাব আনয়ন করিলাম। এসময় ইউনিয়ন পরিষদেে ১নং ওয়ার্ডের সদস্য সাদেক মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, ৩নং ওয়ার্ডে সদস্য আমির আলী, ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রুপন মিয়া, ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জাহিদুল ইসলাম, ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. ওমর ফারুক, মহিলা সদস্য কুহিনূর বেগম, মোছা. ছুরতুন নেছা ও মোছা. রওশন আরা।
 
পূর্ব পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুক মিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগে অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে৷ যারা অভিযোগ করেছেন তারা বিভিন্ন সময় মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে টাকা নিলে আমি বাঁধা দেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি এ টাকার ব্যাপারে কোনো কিছুই জানি না। পিআইসির সদস্যরাই টাকা তুলেছেন। অশালীন কথা-বার্তার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করে বলেন, সকলের ঘরে মা বোন ভাই আছে। আমি এমন ব্যবহার কখনো কারো সাথে করিনি। গল্লা দিয়ে মেরে কাউকে বের করে দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
 
অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ার উজ্ জামান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এখন কাজের ধারাবাহিতা বজায় রেখে তদন্ত করা হবে। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে  অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের  বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।