শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিলেটের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। উদ্বেগ প্রকাশ করে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্যে ওই দুইটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানিয়েছেন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রথমেই রোববারে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। ফেইসবুক স্ট্যাটাসে মিসবাহ সিরাজ বলেছেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা হামলা করে কোন ছাত্র আন্দোলন দমানো যায়নি কখনো,আলোচনার মাধ্যমে এইসব ঘটনার সমাধান খুব সহজেই সম্ভব ছিল। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই,সকল পক্ষকে সহনশীলতা প্রদর্শনের অনুরোধ করছি, আহত ছাত্রদের সঠিক সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক।
এর একদিন পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, দু:খজনক ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি এবং আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন মন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে সিলেটের প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তদন্তে যাদের অপরাধ ধরা পড়বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান না নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন এতে করে সুযোগ সন্ধানীরা ইস্যু বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার সুযোগ পাবে। মঙ্গলবারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে ক্যাম্পাসে গেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। নেতাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আশফাক আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, সিসিকের ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াছ প্রমুখ। আওয়ামী লীগ নেতারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালানোর আহবান জানান। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, সবাই শিক্ষার্থীদের সাথে আছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নির্দেশে ক্যাম্পাস থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকার আন্তরিক। এসময় শিক্ষার্থীরা শাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন। একইসাথে ‘দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায়’ প্রক্টর ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করেন তারা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা দাবিতে আন্দোলনরত আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী। সোমবার রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের শয্যাপাশে তিনি অবস্থান করে তাদের সান্ত্বনা দেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত দুঃখজনক ঘটনায় আহত মেধাবী ছাত্র সজল কুন্ডকে দেখতে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। ১৭ জানুয়ারি রাতে অধ্যাপক জাকির হোসেন সজল কুন্ডের পাশে কিছু সময় কাটান এবং তার শারীরিক অবস্থার খবর নেন।
ওই সময় সজল কুন্ডের সাথে মোবাইলফোনে কথা বলে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তাঁর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গুলি লাঠিচার্জ এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। বিএনপি সিলেট মহানগর শাখার পক্ষ থেকে সিলেট মহানগর বিএনপির আহবায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালি পংকি ও সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকী সোমবার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরিহ ছাত্র ছাত্রীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সিলেট জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা অনুষ্ঠিত। সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টায় মিছিলটি নগরীর দরগাহ গেট থেকে শুরু করে বন্দর বাজার পয়েন্টে এসে মিছিল পরবর্তী পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।