শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল সজল কুণ্ডুর। গায়ে লেগেছিল ৬৩টি স্প্লিন্টার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজলকে সেদিনই সংজ্ঞাহীন অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন দুদিন। আইসিইউ থেকে বের হয়েছেন মঙ্গলবার। এরপর আজই চলে এসেছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে।
বুধবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন উপাচার্য বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করলে সেখানে হুইলচেয়ারে করে উপস্থিত হন সজল। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতিও প্রকাশ করেন তিনি। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে আবার তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রোববার উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে উপাচার্যকে মুক্ত করে পুলিশ।
এ সময় পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ বাধে। ওই দিন ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ার কথা জানায় পুলিশ। যে ভবনে সেদিন উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, সেই ড. ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের ক্যান্টিন ইজারা নিয়ে পরিচালনা করেন সজল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি এ ব্যবসা করেন তিনি।
সংঘর্ষের সময়ও নিজের ক্যান্টিনে ছিলেন সজল। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আন্দোলনে ছিলাম না। ক্যান্টিনে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ দেখতে পাই পুলিশ শিক্ষার্থীদের মারধর করছে। আমার দুই বন্ধুকেও মারছিল। তখন আমি তাদের বাঁচাতে এগিয়ে যাই।’
সজল বলেন, ‘এ সময় পুলিশ আমাকে বেদম পেটায়। আমি মাটিতে পড়ে যাই। পুলিশ আমার ওপর সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এরপর আমি জ্ঞান হরাই।
চিকিৎসকদের বরাতে সজল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের কেউ আমাকে দেখতেও যায়নি।’
সজলের অভিযোগ প্রসঙ্গে শাবি প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীর বলেন, ‘আমরা আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করব। তবে এখনও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আমরা অনেককে দেখতে যেতে পারিনি। তবে সবারই খোঁজখবর নিচ্ছি।’
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনকারী ২৪ শিক্ষার্থী। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। উপাচার্যের বাসভবনের পাশে অনশন চলাকালেই অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।