গাজীপুরের শ্রীপুরে সড়কে চাঁদাবাজি ও পুলিশী হয়রানির প্রতিবাদে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের শতাধিক মালিক শ্রমিকরা বাস চলানো বন্ধ করে প্রতিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে মালিক ও চালকরা। তাতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে এই ঢাকাগামী শতশত যাত্রী। প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের লিমিটেড এর আহবায়ক কমিটির নাম করে প্রতিটি বাস থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে নামমাত্র পরিবহন আহবায়ক কমিটি। মালিক ও চালকদের অভিযোগ গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে চাঁদার পরিমাণ ও পুলিশী হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ।
আজ (১৭ জুলাই )সোমবার শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার, মাওনা, বরমী ও ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখাযায়, প্রভাতী বনশ্রী বাস মালিক ও চালক শ্রমিকরা বস বন্ধ করে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ও পুলিশী হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছে। তাতে করে এসকল বাসস্ট্যান্ড থেকে চলাচলকারী ঢাকাগামী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তি। মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায় সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ বিনা রিসিটে চাঁদাবাজি ও পুলিশী হয়রানির বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেড আহবায়ক কমিটির নেতারা এই অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরদিকে পুলিশের সঙ্গে বুঝাপড়া না করার কারণে পুলিশী হয়রানি বেড়েছে বহুগুণ।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের বাস মালিক মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেড এর আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহম জৈনা বাজার, বরমী বাজার, ত্রিমোহনী এবং মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের লোকজন দিয়ে চাঁদা নিচ্ছে। চাঁদা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বুঝাপড়া করার কথা, কিন্তু তাঁরা তা করছে না। তাতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে হয়রানি করছে। বিনা কারণে মামলা দিচ্ছে। তিনি আরও জানান শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের শতাধিক বাস চলাচল করে ঢাকা অভিমুখে।
বাস মালিক আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন গাড়ি প্রতি এক হাজার ৭০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে। এর পরিমাণ গত একমাস আগেও খুবই কম ছিলো। হঠাৎ করে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেড এর আহ্বায়ক কমিটির নেতারা এর পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর প্রতিবাদে শ্রীপুর থেকে সকল প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন করছি। সমাধান না হলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের বাস চালক মো. রিপন মিয়া বলেন, জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু চাঁদাবাজি, আর শেষ হয় ঢাকায় গিয়ে। জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে ৫০টাকা, মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে ৫০ টাকা, ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে ২৫০ টাকা, বরমী বাসস্ট্যান্ডে ২০০ টাকা গাজীপুর বাসস্ট্যান্ডে ৭০ টাকা ও সর্বশেষ গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে ১১৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বিনা রিসিটে। সবশেষে দিনশেষে মালিক কর্মচারীদের কিছু থাকে না। চাঁদাবাজির জন্য আমরা অতিষ্ঠ। এরপর রয়েছে পুলিশী হয়রানি। গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ পুলিশ বিনা কারণে মামলা দিচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছেন নেতারা পুলিশের সঙ্গে বুঝাপড়া করছে না। আমার বিশ্বাস এজন্য পুলিশী হয়রানি বেড়েছে।
ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় লোকমান হোসেন নামে এক যাত্রীর সঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলাম বাস চলাচল বন্ধ। পড়লাম খুবই বিড়ম্বনায়। কি আর করার অন্য কোন পরিবহনে মহাসড়কে গিয়ে অন্য বাসে ঢাকায় যেতে হবে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন চাঁদাবাজদের জন্য বাড়ির পাশেও বাসস্ট্যান্ডে পেয়েও সুখ পেলাম না। কয়েক দিন পরপরই চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বাস বন্ধ হয়। তাতে ভোগান্তির পড়তে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। চাঁদাবাজদের বিচার হয় না।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেড এর আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অভিযুক্ত জালাল আহমেদ বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি যে কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে টাকা তুলি, সেগুলো দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বুঝাপড়া করি। গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুলিশী হয়রানি করে না। এরপর অনন্য নেতারা দেখেন। আর এটা চাঁদাবাজি বলা যাবে না। এই টাকা দিয়ে লাইনম্যান ও সুপারভাইজারের বেতন দেয়া হয়। বেশি টাকা নেয়ার বিষয়টি ঢাকার নেতারা বলতে পারবে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি কংকন কুমার বিশ্বাস বলেন, শ্রীপুরে বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। তবে আজ বাস বন্ধ করে রেখেছে মালিক পক্ষ। আর পুলিশী হয়রানির বিষয়টি আমার নির্ধারিত সিমানার মধ্যে নয়। এবিষয়গুলোর খোঁজ খবর নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের পরামর্শে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।