ঢাকা, শুক্রবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ই মাঘ ১৪৩১
২২ বা ২৪ নয় কেন, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের

সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে ২১ বছর বয়সের সুপারিশ কেন?

এম এম লিংকন | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১২:০১:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হওয়ার বয়স ২১ বছর করতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যুক্তিসংগত নয় বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও নির্বাচন বিশেজ্ঞরা। তাদের মধ্যে কেউ বলছেন, এটা ২১ কেন? ২২ বা ২৩ বা ২৪ নয় কেন? আবার কেউ মতামত দিয়েছেন দেশের একজন আইন প্রনেতা হতে ২১ বছর বয়স একটু অপিরপক্কই হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থী হতে নূন্যতম ২৫ বছর বয়স লাগে। একইসঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হতে তরুনদের জন্য যেন ১০ শতাংশ মনোনয়ন প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতেও সুপারিশ করেছে সংবিধান সংস্কার কমিটি। 

অন্যদিকে তরুণ-পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১০ শতাংশ মনোনয়ন প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বরাদ্দ দিতে সুপারিশ করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তবে, তরুন বলতে কত বছর বয়সকে ধরা হচ্ছে তা উল্লেখ করেনি, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। আবার সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন শত শত সুপারিশ করলেও সংসদ সদস্য হতে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগত্যর সুনিদিষ্ট কোন মাপকাঠি উল্লেখ করেনি।  

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ড. শাহদীন মালিক দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, ২১ কেন? এটা ২২ বা ২৩ অথবা ২৪ কেন নয়? ২১ বছরে তো সচারচার একজন স্নাতক পাসও করতে পারে না। তাহলে কি আমরা পিছনে ফিরতে চাইছি? এসবে দেশের ভালো কোন কাজে আসবে মনে করছেন না তিনি। 

এমপি প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুনদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশের বিষয়ে এই বর্ষীয়ান আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, উপযুক্ত যোগ্য মানুষ প্রার্থী হবে এতে কোন এক জেনারেশনের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে কেন? তাহলে তো আমিও দাবি করছি বৃদ্ধদের জন্য ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হোকঅ আর মধ্য বয়সীদের জন্যও কিছু শতাংশ বরাদ্দ রাখা হোক। 

সংসদ এক কক্ষ থেকে দুই কক্ষ অর্থাৎ মিম্ন ও উচ্চ কক্ষ করার যে সুপারিশ করেছে সঙবিধান সংস্কার কমিশন তা আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয় বলে মন্তব্য করেছেন ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলছেন, দেশের বেশির মানুষ এখনও গণতন্ত্রই ভালোভাবে বুঝে না। সেখানে উচ্চ কক্ষ করার বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

তিনি বলছেন, গত ৫০ বছরে পৃথিবীর একটি মাত্র দেশ এই প্রক্রিয়ায় গেছে। আর কেউ যায়নি। তবে, পৃথিবীর আর কেউ না পারলে আমারা পারবো না এমনটা না। আমরা এই আইন করে আগামী ৫০ বছর ছাগল দিয়ে হাল চাষ করানোর চেষ্টা করতে পারি বলে বিষয়টি নিয়ে উপহাস করেন তিনি। যোগ্য-শিক্ষিত-সৎ-ব্যাক্তি যারা দেশ ও দশের উপকারে আসবে তারা সংসদ সদস্য হলেই দেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। 

২১ বছর বয়সে সংসদ সদস্য প্রার্থী হওয়ার সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক বায়ান্নকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই। আবার কত বছর বয়স থেকে কত বছর বয়স পর্যন্ত তরুন বলা যায় এই বিষয়েও কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান।     

দেশের একজন আইন প্রণেতা হতে ২১ বছর বয়স হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার সভাপতি মনিরা খানম। তিনি বলছেন, দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য আইন প্রণয়ন করেন একজন সংসদ সদস্য। আইন প্রনেতা হতে গেলে তো আইন সম্পর্কে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। আর স্নাতক পাস করতেও তো ২১ বছরের বেশি সময় লাগে।

১৫ সংবিধান সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বেশকিছু সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে জমা দেয়। 

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, কমিশন একটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রস্তাব করছে। একটি নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ এবং একটি উচ্চকক্ষ (সিনেট)। উভয় কক্ষের মেয়াদ হবে ৪ বছর।

নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে ৪০০ জন প্রতিনিধি নির্বাচনের সুপারিশ করেছে আলী রীয়াজ কমিশন। যেখানে ৩০০ জন সদস্য সমান সংখ্যক সংসদীয় এলাকা থেকে নির্বাচিত হবেন। আর ১০০টি নির্বাচনি এলাকা থেকে ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন ১০০ নারী সংসদ সদস্য।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, নিম্নকক্ষ গঠিত হবে সংখ্যগরিষ্ঠ ভোটে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে। ৪০০ (চারশো) আসন নিয়ে নিম্নকক্ষ গঠিত হবে।

৩০০ (তিনশো) জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। আরো ১০০ জন নারী সদস্য সারা দেশের সকল জেলা থেকে এই মর্মে নির্ধারিত ১০০ (একশটি) নির্বাচনি এলাকা থেকে কেবল নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন।

বায়ান্ন/এমএমএল/একে