বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছাড়ার নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্নীতিবাজরা ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত, সাবেক ভ’মি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দসহ আটক শতশত নারী-পুরুষ। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ ছাড়ছেন দুর্নীতিবাজরা। বৈধপথ এড়িয়ে অবৈধ্যভাবে সীমান্তের তারকাটা পেরিয়ে অনেকে যাচ্ছেন ভারতে। দেশের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য রুট ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত। এ সীমান্ত থেকেই গত দুই মাসে বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছে সাবেক ভুমি মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দসহ ৩২৬ জন নারী-পুরুষ। স্থানীয়রা বলছেন, মহেশপুর ৫৮ বিজিবি’র হাতে আটক হওয়া ব্যক্তিদের কয়েক গুণ বেশি মানুষ পার হয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।
ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে ১১০ কিলোমিটার দুরে মহেশপুর সীমান্ত। ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশপরগার বাগদা থানা। আর বাংলাদেশের অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা। ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে তারকাটার বেড়া। আর বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা রয়েছে বাংলাদেশের এ অংশে।
বাংলাদেশ সীমান্তের তার কাটাবিহীণ এই এলাকাটাকেই নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে দুর্নীতিবাজরা। স্থানীয় দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেকে। বিজিবি’র হাতে মাঝে মধ্যে আটক হলেও অনেকেই যাচ্ছেন ভারতে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোক রাতের আধারে সীমান্তে আসছে। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিজিবি’র চোঁখ ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছে ওপারে।
এদিকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পাচার রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্ত ব্যবহার করে যেন দুর্নীতিবাজ ও চোরাকারবারীরা ভারতে পাড়ি জমাতে না পারে যে জন্য টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার এলাকার সড়ক গুলোতে প্রতিনিয়ত করা হচ্ছে তল্লাসী। সেই সাথে করা হচ্ছে স্থানীয়দের সচেতন।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী. বাংলাদেশীরা পাসপোর্টবিহীন অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রক করে ভারতে যাওয়ার সময় আটক হলে ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যদেশ আইনে মামলা করে থানায় দেওয়া হয়। এ আইনের সাজা ৩ মাস কারাদন্ড অথবা ৫০০ শত টাকা জরিমানা। ফলে আদালতে আসামীরা সহজেই জামিন পেয়ে যায়। ভারতীয় বা অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে ‘দ কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট-১৯৫২’ আইনে মামলা হয়। এ আইনে এক বছরের কারাদন্ডের নিয়ম থাকলেও জরিমানা কত টাকা তা উল্লেখ নেই। দুটি মামলাই জামিনযোগ্য।
ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু জানান, অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে ‘দ কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট-১৯৫২’ আইনে যে মামলা হয়। আর এ আইনে এক বছরের কারাদন্ড ও জরিমানা বিধান আছে। তাই এ দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। দুই আইনেই অপরাধীর সাজা ও জরিমানা কম এবং জমিনযোগ্য হওয়ায় ধরা পড়লেও আসামি জামিনে বেরিয়ে আসে বলে। তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের ধরতে নিরুৎসাহিত হয়। তাই আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি। সংশোধন করে সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের মাধ্যমে মানুষকে সাজার দেওয়ার মানে হলো নজির স্থাপন বা ভীতি সঞ্চার করা। যাতে করে অপরাধীরা ভয় পায় এবং অপরাধমূলক কাজ থেকে বেরিয়ে আসে।
ঝিনাইদহের মহেশপুর খালিশপুর ব্যাটালিয়ন (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক, লে. কর্ণেল শাহ মোঃ আজিজুস শহীদ জানান, বাংলাদেশের সীমান্তের অংশ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলা। ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটার রয়েছে তারকাটার বেড়া। আর বাকি ১০ কিলোমিটার বাংলাদেশের অংশ পুরোটাই অরক্ষিত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা রয়েছে বাংলাদেশের এ অংশে। পাচার শত ভাগ বন্ধ করতে না পারলেও তা প্রায় কাছাকাছি বলে দাবি বিজিবি’র ওই কর্মকর্তার।
তিনি আরও জানান, বিজিবি’র নজরদারি পদ্ধতি বদল করা হয়েছে। যার সফলতাও ইতি মধ্যে আসছে। সীমান্তের কিছু অংশে ভারতের অভ্যন্তরে কাঁটাতার না থাকায় পাচারকারীরা ব্যবহারে আগ্রহী হয়। পাচার রোধে সেখানে কাঁটাতার নির্মাণে বিএসএফের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর, লড়াইঘাট সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র রয়েছে মাত্র ১২ টি বিওপি বা ক্যাম্প। গত দুই মাসে এসব সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে ১৪ পাচারকারীসহ ৩২৬জন ব্যক্তিকে।