ঢাকা, রবিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯শে পৌষ ১৪৩১
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল

১২ বছরে ভবন বুঝে না পাওয়ায় শুরু হচ্ছে না স্বাস্থ্যসেবা, নষ্ট হওয়ার ঝুকিতে দামি যন্ত্রপাতি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১২ নভেম্বর ২০২৩ ০২:২৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

সব আছে তবুও যেন কিছুই নেই। সব হয়েও হচ্ছে না। যে ভাবেই ব্যাখ্যা করেন শুধু সমন্বয়হীনতার কারণে চালু যাচ্ছে না নব নির্মিত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০১১ সালে শুরু হয়েে ২৩ পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও নির্মানদণ কাছের শতভাগ শেষ করতে পারছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।দিচ্ছি দিচ্ছি করে এখনো ভবন বুঝিয়ে দিতে পারিনাই। সর্বশেষ ডিসেম্বরে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভবন বুঝে না পাওয়ায় বহিরভাগের সেবা চালু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।  হাসপাতালের একাংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগ। আবার স্বাস্থ্য সেবা চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি লিখেও অনুমতি পত্র ফেরত খামে আসেনি, ফলস্রুতিতে দামি দামি যন্ত্রপাতি ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণাধীন ভবনে। এসব যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা আছে  বলে জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । হাসপাতালের পরিচালক ডা. মারুফ হাসান বলেন, প্রকল্পের পরিচালক সম্প্রতি হাসপাতালের একটি অংশ তাদের বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে বহির্বিভাগে সেবা চালু করা হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যোগদানও করেছেন। তবে ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বারবার সময় নিলেও তা হয়নি। এসব কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

 

কয়েকবার মেয়াদ বাড়ানোর পর সর্বশেষ চলতি বছরের জুন মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয় ৮৯%, গণপূর্ত ও প্রকল্প পরিচালক খরচ করতে না পারা বাকি কাজের ১৮০ কোটি টাকা সরকারী কোষাাগারে ফেরত চলে যায়। এখন কাজ প্রায় শেষের পথে চলে আসলেও ফেরত আসছে না ফেরত চলে যাওয়া টাকা। গণপূর্ত বিভাগ জানান, টাকা ফেরত দিতে অর্থমন্ত্রণালয় সবুজ সংকেট দিয়েছে।

 

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা যায়, হাসপাতাল ভবনের সবটুকু বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা শুরু করার অনুমতি মিলবেনা। চিকিৎসা সেবা চালুর সাথে হাসপাতালের অনেক বিভাগ অনেক বিষয় জড়িত থাকে। সীমানা প্রাচীর, সংযোগ সড়ক, প্রধান ফটকে নিরাপত্তা গেট নির্মান, রোগী ও রোগীর স্বজনের সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত,  বিভিন্ন বিভাগ পরিপূর্ণ চালু ইত্যাদি।

 

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনের নির্মাণকাজ শেষে চলতি বছরের জুনের মধ্যে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার ও গণপূর্ত। এরপর মেয়াদ শেষে আবার ছয় মাসের জন্য বাড়িয়ে ডিসেম্বরে প্রকল্প সমাপ্ত করার কথা বলা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে। এ সময়ের মধ্যে হাসপাতালসহ অন্যান্য ভবনের কাজ শেষ করা ছাড়াও সব সড়ক, প্রাচীর ও গেট নির্মাণ করতে হবে। গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, নভেম্বরের প্রথম

সপ্তাহ পর্যন্ত প্রকল্পের ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।  ১০তলা ভিত্তির ওপর এখন সাততলাবিশিষ্ট হাসপাতালের কাজ শেষ হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগকে গত মাসের ২২ তারিখ একটি অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার চেষ্টা করছে তারা।

 

গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়াদ বাড়লেও ফেরত যাওয়া অর্থ এখনও ছাড় হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড়ের বিষয়ে সবুজ সংকেত মিলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়ের বিষয়ে কাজ চলছে। তারা হাসপাতালের পুরো কাজ শেষ করেছেন। ইতোমধ্যে সেবা চালুর জন্য বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন বাকি কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের।

 

সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কয়েকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ এমপি।

হাসপাতালটি তাঁর নির্বাচনী আসন সদরের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় ভোটের আগেই এটি চালুর বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা ছিল। নির্বাচনের তপশিলের আগেই হাসপাতাল চালুর বিষয়ে তোড়জোড় চলছে বলে জানা গেছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক হাসপাতাল ভবনে নিযুক্ত ভান্ডার কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান বলেন,

হাসপাতাল ভবন চালু করতে গেলে এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। এমআরআই মেশিন,

সিটিস্ক্যানারসহ কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন অবস্থায়

হাসপাতাল কক্ষে বিক্ষিপ্তভাবে রাখা আছে। যে কোনো সময় বড় কোনো অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক চৌধুরী ডা. সরওয়ার জাহান জানান, নতুন করে টেন্ডার শেষে সব পণ্য ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। ফেরত যাওয়া অর্থ ছাড়ের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। অর্থ না পেলে অনেক কাজও করা যাচ্ছে না।

 

প্রকল্প দপ্তর সূত্রের তথ্যে জানা যায়, ১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে

হাসপাতাল নির্মাণকাজ শেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগে হস্তান্তর করার কথা ছিল।

কিন্তু ধাপে ধাপে একাধিকবার প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয় ৬৮২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপরও কাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।