ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

১৮ বছরেও অধরা ১২ জন

Author Dainik Bayanno | প্রকাশের সময় : রবিবার ২১ অগাস্ট ২০২২ ০১:৪১:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১২ আসামি এখনও পলাতক। এর মধ্যে ছয় জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক মামলার কথা বলে দুজন নোটিশ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে পেরেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পলাতকদের গ্রেফতারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

 

চলতি বছরেই র‌্যাব এই মামলার অন্যতম দুই আসামি হরকাতুল জিহাদের নেতা শফিকুল রহমান ও আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করেছে। গত বছর ইকবালকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় এখনও যারা পলাতক তারা হলেন— বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবু।

 

 

সূত্র জানায়, পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়। তবে রাজনৈতিক মামলার অজুহাত দেখিয়ে তারেক রহমানের পক্ষে আবেদন করে সেই নোটিশ নামিয়ে ফেলা হয়েছে।

 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে তারেক রহমান লন্ডনে বাস করছেন। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর শাহ মোফাজ্জাল হোসেন কায়কোবাদের বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। তিনিও একই অজুহাতে আবেদন করে রেড নোটিশ প্রত্যাহার করিয়েছেন। বর্তমানে কায়কোবাদ কিছুদিন সৌদি আরব ও কিছুদিন আরব আমিরাতে বাস করছেন বলে জানা গেছে।

 

২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। সম্প্রতি হারিছ চৌধুরী ঢাকার পান্থপথ এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় মারা যান বলে একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর খাতায় এখনও তিনি পলাতক।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, পলাতক অন্য আসামিদের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ যুক্তরাষ্ট্রে, মোহাম্মদ হানিফ ভারত কিংবা দুবাই, জঙ্গিনেতা তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকায়, মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মোরসালিন ভারতের তিহার জেলে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বাকিদের মধ্যে মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গির আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবুর অবস্থানের বিষয়ে কোনও তথ্য জানা যায়নি।

 

 

 

পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, পলাতকদের অনেকেই দেশের বাইরে। কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু ধারণা থাকলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তাই তাদের গ্রেফতার বা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করাও সম্ভব হচ্ছে না।

 

র‌্যাব সূত্র জানায়, আলোচিত এই মামলার পলাতক আসামিদের ধরতে র‌্যাব নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমানকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

 

২৫ মে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে মাওলানা আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করা হয়।

 

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পলাতকদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। বাকিদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের গ্রেফতারে নিয়মিত গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

এদিকে বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামিদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এ মামলার ব্যাপারে সরকার অত্যন্ত তৎপর।’

 

 

 

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হন।

 

২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল-১ এই মামলার রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁসির দণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।