ঢাকা, শনিবার ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮ই মাঘ ১৪৩১

৭৮ বছরে পা রাখলেন মির্জা ফখরুল, গণতন্ত্র ফিরে পাবার প্রত্যাশা

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ ০৩:২৬:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

নিজের ৭৮তম জন্মদিনে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টেলিফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, জন্মদিন আমি আসলে পালন করি না। ৭৭ বছর বয়স পেরুলাম, বলতে পারেন একটা লং জার্নি। এই ৭৭ বছরে বহু পরিবর্তন দেখেছি, বহু ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি, বহু জীবন দেখেছি, অনুপ্রাণিত হয়েছি। বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পেয়েছি। এখন যাওয়ার পালা। তবে আশা এখন একটাই, প্রত্যাশা একটাই, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দিকে যাবে, গণতন্ত্র ফিরে পাবে। 

এই গণতন্ত্রের জন্য আমাদের দেশের মানুষ, আমাদের বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীরা যে আত্মত্যাগ করেছে, ফ্যাসিস্টদের যে নিপীড়ন, নির্যাতন ভোগ করেছে, গুম-খুনের শিকার হয়েছে, নির্মমতার মুখে পড়েছে এই রকম চিত্র আপনি কোথাও খুঁজে পাবে না। 

রোববার (২৬ জানুয়ারি) ৭৭ বছর পূর্ণ করলেন মির্জা ফখরুল। ১৯৪৮ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁওয়ে তার জন্ম।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এবার আমার গোটা পরিবারই ঢাকায়। একসাথে এবার এই দিনটি কাটছে। সকালে ঘুম ভাঙে দুই মেয়ের ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ শুনে, আমার নাতি-নাতনিরাও উইস করেছে নানাকে, এটা অন্যরকম এক আনন্দ। ২৬ জানুয়ারি জন্মদিনের প্রথম প্রহর থেকেই বন্ধু, স্বজন, নেতাদের অনেকে টেলিফোন করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সকাল বেলা স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও এক কাপ দিয়ে জন্মদিনের উইশ করেছেন। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, সিনিয়র নেতারাও টেলিফোন করেছেন।

ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন শাখার সভাপতি এবং এসএম হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন ফখরুল। ঢাকা কলেজ, দিনাজপুর কলেজে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।

১৯৮৬ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮৮ সালে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে জিতে হন চেয়ারম্যান।

ছাত্রজীবনের বাম রাজনীতি থেকে উঠে আসা মির্জা ফখরুলের জাতীয় রাজনীতিতে হাতেখড়ি মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর দল ন্যাপে, ভাসানীর হাত ধরে রাজনীতি আকাবাঁকা পথ অতিক্রম করেছেন। সেখান থেকেই তার বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক দল হিসেবে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিতে যোগদান যে দলটি প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমান।

১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর একান্ত সচিব ছিলেন ফখরুল।

১৯৯২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি, পরে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব পদে উঠে আসেন তিনি। ২০১১ সাল থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে মহাসচিব নির্বাচিত হন।

বিএনপির শীর্ষ পর্য়ায়ের নেতৃত্বে আসার আগে তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রথম সহসভাপতি এবং পরে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন দীর্ঘদিন।

ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফখরুল। ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারে তাকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া।

২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসন থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তিনি শপথ না নেওয়ায় ওই আসনে উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির জিএম সিরাজ সংসদে যান।

দুই মেয়ে নিয়েই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাহাত আরা বেগমের সংসার। বড় মেয়ে মির্জা শামারুহ অস্ট্রেলিয়ায় স্বামী-সন্তান নিয়ে আছেন। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ নিয়ে এখন ক্যানবেরার ফেডারেল মেডিকেল কাউন্সিলের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কয়েকদিন আগেই শামারুহ মির্জা ও তার স্বামী ঢাকায় এসেছেন। ছোট মেয়ে মির্জা সাফারুহ ধানমণ্ডির সানি ডেল স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

বায়ান্ন/আরএইচ/একে