রানিং অ্যালাউন্সকে মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত করে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধার দাবি নিয়ে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা গতকাল, ২৮ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। ফলে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
একাধিক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি, কিন্তু কোনো ট্রেন আসেনি। আমাদের না জানিয়েই এমন কর্মসূচি নেওয়া খুবই অন্যায়।”
স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের একাংশকে বিআরটিসি বাসের মাধ্যমে গন্তব্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলেও সেটি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ছিল। এদিকে, টিকিট রিফান্ড নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন অনেক যাত্রী।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ভিআইপি রুমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলামের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। তবে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়।
রানিং স্টাফদের প্রতিনিধি সাইদুর রহমান বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আমাদের দাবিতে অনড়। আমাদের বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব।”
তিনি আরও জানান, রানিং স্টাফদের সপ্তাহে কোনো ছুটি নেই। ঝড়-বৃষ্টি কিংবা কালবৈশাখী—সব প্রতিকূলতায় তারা দেশের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছেন। তবে ২০২২ সালে নিয়োগ পাওয়া রানিং স্টাফরা ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
অন্যদিকে, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখে এমন কর্মসূচিকে “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “রেলের অনেক দাবি ইতোমধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আর কোনো দাবি পূরণের সুযোগ নেই।”
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সব দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য উভয় পক্ষেরই উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন।”
আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা পিছু হটবেন না।
একজন আন্দোলনকারী রানিং স্টাফ দৈনিক বায়ান্নকে বলেন, “আমরা দিনের পর দিন বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। সবাই সমান সুযোগ সুবিধা না পেলে এই আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনীতি, পণ্য পরিবহন এবং যাত্রীদের দৈনন্দিন জীবন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, দ্রুতই উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাবে এবং এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠবে।
সরকারি মহল ও রেল কর্মচারী উভয়ের দৃষ্টি এখন পরবর্তী আলোচনার দিকে, যেখানে দেশের যাত্রীসাধারণ একটি কার্যকর সমাধানের প্রত্যাশায় রয়েছেন।
বায়ান্ন/এমএমএল/এএস/একে