ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আনোয়ারা উপকূলে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা

রিয়াদ হোসেন, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৪ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:২৩:০০ পূর্বাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শুঁটকির ব্যবসা। সরবরাহ ভাল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা থাকায় দিন দিন বাড়ছে এর উৎপাদন।উপকূল জুড়ে চলছে এখন মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরী করার ব্যস্ততা।

পরিবার নিয়ে জেলেরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লইট্যা,ছুরি,ফাইস্যা,চইক্যা,পোপা ও চিংড়িসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ বিভিন্ন মাছের  শুঁটকি তৈরীতে। আর কম দামে এসব শুঁটকি কিনে আসল স্বাদ পেতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তসহ চট্টগ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী,আড়তদার এবং খুচরা ক্রেতারা ভীড় জমাচ্ছেন সমুদ্রের উপকূলে। শুঁটকি কারিগররা এবং ক্রেতারা মনে করেন এই শিল্পকে  সরকারি পর্যবেক্ষণ,অনুদানের মাধ্যমে যদি সুদৃষ্টি দেওয়া হয় তাহলে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

সরে জমিনে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর ) বিকেলে উপজেলার উপকূলের বাচা মিয়া মাঝির ঘাটে দেখা যায়, চাঠাই,প্লাস্টিক বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে ছোটো ছোটো নানা রকমের মাছ। জেলেরা বাতাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ঝেরে ঝেরে ছোটো শুকনা চিংড়ি শুঁটকি গুলো থেকে ময়লা আলাদা করছে। আর ছোটো ছোটো মেয়েরা ছোটো-বড় শুঁটকি আলাদা করে বেছে রাখছে। আবার অনেকেই দেখা যায়,বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি করে টাঙ্গিয়ে টাঙ্গিয়ে শুকানো হচ্ছে লইট্যা,ছুরি,ফাইস্যা,চইক্যা,পোপা মাছ। জেলেরা সারিবদ্ধ ভাবে বেঁধে বেঁধে এসব মাছ শুকাচ্ছে। শুটকি তৈরি হওয়ার পর ড্রাম,লাই,বস্তায় ভরে ট্রাকে করে এসব নেওয়া হচ্ছে আশেপাশের হাটবাজারসহ বিভিন্ন জেলায়। 

চিংড়ি মাছের শুটকি তৈরি কারী মোহাম্মদ ইসমাঈল জানান, মসজিদ কমিটি থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে আমরা এখানে প্লট ভাগ করে করে তেরপাল, প্লাস্টিক দিয়ে চিংড়ি শুকানোর জন্য তা প্রস্তুত করি। তারপর সাগর থেকে চিংড়ি এনে বিক্রি করা জেলেদের থেকে চিংড়ি মাছ কিনে তেরপালে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরী করি।  এই ঘাটে প্রায় ২হাজার মানুষ এই শুঁটকি তৈরী করার কাজে নিয়োজিত আছে। আমাদের প্লটে আছে ৩০-৩৫ জন। এই শুটকি ১দিনেই তৈরি হয়ে যায়,  এগুলো আমরা কেজি ৬০০-৮০০ পর্যন্ত বিক্রি করি। ১০-১১ দিন পর পর তেরপালসহ সব কিছু পরিবর্তন করে আবার নতুন করে জায়গা তৈরি করি। এরকম এক ডালায় আমাদের শ্রমিকের মজুরি, মাছের দাম,জিনিসপত্র সব মিলে লাখ টাকার উপর খরচ হয়। তবে সব মিলিয়ে বেশির ভাগ সময় লাখ-দেড় লাখ টাকা লাভ হয়। এইভাবে শীত মৌসুমে ৩-৪মাস পর্যন্ত এই শুঁটকি তৈরীর কাজ চলবে বলেও তিনি জানান।

 শুঁটকি কাজে কর্মরত রহিম মিয়া বলেন,এসব শুটকি তৈরি করতে সপ্তাহ থেকে ১০ দিন মতো সময় লাগে। একবার শুঁটকি তৈরী করতে এই আড়তে ১লাখ থেকে ১লাখ ২০ হাজার মতো খরচ হয়। খরচ পুষিয়ে প্রায় ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত লাভবান হওয়া যায়।

এই বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রাশিদুল হক বলেন,শীত মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার উপকূলে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে।  গত বছর ২০ টন মতো শুঁটকি উৎপাদন করা হলেও এবার উৎপাদন বেড়ে ৩০ টন মতো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  এখন পর্যন্ত প্রায় ৮টন মতো শুঁটকি উৎপাদন করা হয়েছে।