ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

ইকো ব্রিকসে ভাগ্য বদলেছে সিদ্দিকের

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৬ জানুয়ারী ২০২৩ ১২:১৮:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

কৃষিকাজের আয় থেকে সংসারের ভরণপোষণ চালাতেন সিদ্দিক। আবাদি জমি অল্প হওয়ায় কৃষি থেকে আয় হত কম। সে আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতেন তিনি। তাই বাড়ির পাশে একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে শুরু করেন স্যানিটারীর (রিং, ¯øাপ তৈরী) কাজ। এতেও সফলতা কঠিন হয়ে উঠছিল তার।

তবুও কৃষি ও ব্যবসার কাজে সময় ও শ্রম পুরোদমে ব্যয় করে আসছিলেন সিদ্দিক। তবে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারছেননা তিনি। পরে ব্যবসায়ের মোড়ক পরিবর্তনের চিন্তা করেন সিদ্দিক। স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) এর সহযোগিতায় নতুন স্বপ্নের ছোঁয়া পান তিনি। সংস্থাটির সহযোগিতায় ইকো ব্রিকস তৈরী করে সফলতার মুখ দেখছেন সিদ্দিক।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ গ্রামের মৃত রশিদুল হকের সন্তান আবু বক্কর সিদ্দিক। কৃষির পাশাপাশি পাঁচ বছর আগ থেকে স্যানেটারী ব্যবসা শুরু করেছেন তিনি। পরে এক বছর পূর্বে পাঁচ দিন ব্যাপী আবাসিক প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন তিনি।

আবু বক্কর সিদ্দিক পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)‘র সহযোগিতায় ইকো-সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) কর্তৃক বাস্তবায়িত সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট (এসইপি)’র সাব-সেক্টরের আওতায় পরিবেশবান্ধব হলো-বøক ও ইকো ব্রিকস তৈরী করছেন। বছর যেতে না যেতেই সফলতার হাতছানি পেয়েছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন মায়ের দোয়া হলো বøক ফ্যাক্টরি। পাশাপাশি আরো তৈরী হয়েছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান।

কারখানায় কর্মরত শ্রমিক রশিদুল ইসলাম বলেন, আগে পোড়া মাটির ইটভাটায় কাজ করতাম। সে কাজ বাদ দিয়ে এখানে এখন হলো বøক ও পরিবেশবান্ধব ব্রিকস তৈরীর কাজ করছি। আগের চেয়ে এখানে কষ্ট কম বেতন বেশী। আগের তুলনায় এখন পরিবার অনেক ভালো চলছে আমার।

ব্রিকস কিনতে আসা আব্দুস সোবহান বলেন, আগের দুইটি ঘর আমার রয়েছে। সে দুটো ঘর পুড়া মাটির ইট দিয়ে তৈরী করা। এবার নতুন করে একটি ঘর তৈরীর করার জন্য এই ব্রিকস গুলো কিনতে এসেছি। যতটুকু জেনেছি এগুলো দিয়ে ঘরের কাজ করালে প্লাস্টার করার তেমন কোন চিন্তা থাকেনা। সেই সাথে পুড়া মাটির পাঁচটি ইটের সমান একটি ইট।
 
উদ্যোক্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমি স্যানিটারী ব্যবসায়ী। ইএসডিও এর আওতায় একটি স্যানিটারীর আওতায় বাথরুমের কাজ করেছিলাম। সেখান থেকে তাদের সাথে আমার পরিচয়। পরে তারা আমাকে জানান প্রশিক্ষণ দিয়ে ইকো ব্রিকস তৈরী প্রক্রিয়া শেখানো হবে। আমি প্রথমে এটি সম্পর্কে জানতাম না। পরে জানার পর দেখলাম এটি অনেক পরিবেশ বান্ধব। এ ইটের মাধ্যমে আবাদি জমি ও পরিবেশের কোন ক্ষতি হয়নি। তারপর পাঁচ দিনের আবাসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি ব্রিকস তৈরীর কাজ শুরু করি। তারা আমাকে মেশিন দিয়ে সহায়তা করেন। এখনো আমরা এই ইকো ব্রিকসের ব্যবসা বেশ ভালো চলছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে এটি ব্যবহারে প্লাস্টার করা জরুরি ভাবে দরকার হয়না। আমার নিজের ব্যবসার পাশাপাশি এখানে আরো  তিনজনের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। আগের চেয়ে ব্যবসায় আয় বেড়েছে। সামনে এটিকে আরো বড় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট ইএসডিও-এর টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (আর্কিটেক্ট) তওফিক উল আলম বলেন, পোড়া মাটির ইট তৈরীর সঠিক প্রক্রিয়া ব্যবহার না করার কারনে আবাদি জমিসহ আমাদের পরিবেশ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পরিবেশকে এ ধরনের হুমকির হাত থেকে বাঁচাতেই আমরা হলো বøক ও ইকো ব্রিকস নিয়ে কাজ করছি। এটিতে একজন গ্রাহক নানাবিধ সুবিধা পাবেন। ঘর তৈরীর জন্য এমনি পাঁচটি ইটের সমান একটি ব্রিকস। গাঁথুনি করতেও খরচ অনেক কম। ঘর করার পর প্লাস্টার করতে অনেক টাকা লেগে যায়। এ ইট ব্যবহার করা হলে প্লাস্টার না করেও দেখে প্লাস্টারের মত মনে হয়। অল্প খরচে সুন্দর করে ঘর তৈরীর জন্য ব্রিকস একটি অন্যতম বলে আমরা মনে করছি।

সাসটেইনেবল এন্টারপ্রাইজ প্রজেক্ট, ইএসডিও-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার পাঁচটি উপজেলায় আমরা করছি। আমরা প্রথমে তাদের আবাসিক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। মূলত হলো বøক ও ইকো ব্রিকসে জ্বালানি হিসেবে কাঠের যে ব্যবহার সেটি থাকছেনা। যে কারনে এটি পরিবেশবান্ধব। আমাদের ১৮ জন উদ্যোক্তা সফল ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আরো কেউ এ উদ্যোগে আগ্রহী হলে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।