জোর করে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে লাগেজ পার্টির মালামাল বের করা ও চাঁদা দাবি এবং বন্দরের উন্নয়নকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সুমন হোসাইন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে বেনাপোলে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলাটি করা হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার যশোরের বেনাপোল পোর্ট আমলি আদালতে চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে বেনাপোল স্থলবন্দরের সাবেক পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সুমন হোসাইন।
বুধবার সুমনের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় মামলাটি দায়ের করেন বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) শাহিদা শারমিন। তিনি জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। অবশেষে তদন্ত শেষে ১১ সেপ্টেম্বর এটিকে মামলা হিসেবে নেওয়া হয়।
সুমন হোসাইন বেনাপোল গ্রামের তাহাজ্জত হোসেনের ছেলে ও স্থানীয় দৈনিক নওয়াপাড়ার বেনাপোল প্রতিনিধি।
বেনাপোলে বন্দর কর্তৃপক্ষের মামলা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বেনাপোল বন্দর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট দালালি ও বন্দরের বিভিন্ন শেড ইনর্চাজের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন সুমন। কাস্টমস হাউসের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি ও তাদের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জোর করে বন্দরে প্রবেশ করে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের লাইন ছাড়া দ্রুত ভারতে পার করে দেওয়ার কথা বলে ২-৩ হাজার টাকা আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে প্রতিনিয়ত।
সুমন হোসাইন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বন্দরের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে আমি রিপোর্ট প্রকাশ করায় আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। তবে স্থলবন্দরের চেয়ারম্যানকে ঘেরাওয়ের ঘটনাকে সামনে এনে আমার ওপর এই মামলা করা হয়েছে।’
বন্দরের উপপরিচালক মো. রাশেদুর সজিব নাজির জানান, কখনো মাতৃছায়া, কখনো নওয়াপাড়া পত্রিকার পরিচয় দিয়ে সুমন দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট দালালি করে আসছিলেন। লাগেজ পার্টি পার করেও মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছিলেন। বিষয়টি আনসার সদস্যরা বন্দরের তৎকালীন পরিচালক রেজাউল করিমকে জানান। পরে পরিচালক বন্দরের অভ্যন্তরে কেপিআইভুক্ত এলাকায় সুমনের বিনা অনুমতিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ফেসবুক ও অনলাইনে রেজাউল করিম ও বন্দরের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা, বানোয়াট ও অশ্লীল মন্তব্য প্রচার করে কর্মকর্তাদের মানহানি করে। এসব ঘটনার সত্যতা বন্দর ও কাস্টমসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সিসি ক্যামেরায় পাওয়া যাবে।
বন্দরের সাবেক পরিচালক রেজাউল করিম জানান, গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বেনাপোল বন্দর পরিদর্শনে এলে সুমন দলবল নিয়ে তাঁকে বন্দরের গেস্ট হাউসে ঘেরাও করে আটকে রাখেন। স্থলবন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা প্রবিধানমালা, ২০০৭-এর প্রবিধি (১৩) অনুচ্ছেদে স্থলবন্দরকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘সুমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি জানতে পেরে কারও কথায় বিষয়টির পাল্টা হিসেবে এ মামলা করে।’
চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি: বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলাচাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি: বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্ত বলেন, বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ সুমন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ২ সেপ্টেম্বর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি তদন্ত করে বুধবার দুপুরে এটি মামলা আকারে নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সুমন বিভিন্ন সময়ে বেনাপোল বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হুমকি দিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে চাঁদাবাজি করে আসছেন। আমার অফিসাররা তাকে বাধা দিলে সে আমাকেসহ বন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফেসবুক ও অনলাইনে মানহানিকর মন্তব্য করে।’
এদিকে সুমন হোসাইনের মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। যশোরের বেনাপোল পোর্ট আমলি আদালতের বিচারক অভিযোগ আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
সুমন অভিযোগ করেন, তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। বেনাপোল স্থলবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দেখতে যান। সেখানে গিয়ে ঢালাই কাজের ভিডিও ধারণ করেন। এরপর তিনি ওই ভিডিও বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠিয়ে অনিয়মের প্রতিকারসহ এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য চান। কিন্তু তিনি সংবাদ প্রকাশে নিষেধ করে বেনাপোল স্থলবন্দর রেস্ট হাউসে দেখা করতে বলেন। গত ২৩ আগস্ট বিকেলে তিনি বেনাপোল স্থলবন্দর রেস্ট হাউসে যান। সেখানে রেজাউল করিম ও জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে দেখতে পান। তাঁকে টার্মিনাল নির্মাণের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদন করতে চাইলে নিষেধ করা হয়। সংবাদ প্রকাশে অনড় থাকায় বিবাদীরা তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। থানায় মামলা করতে গেলে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই তিনি আদালতে মামলা করেন।