ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০শে কার্তিক ১৪৩১

কাপড় আছে ক্রেতা নেই, হতাশ তাঁত ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩০ অগাস্ট ২০২২ ০৯:১০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

 

রং ও সুতাসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়ায় সিরাজগঞ্জে হুমকির মুখে তাঁতশিল্প। তবে কিছু তাঁত কারখানায় কাপড় উৎপাদন হলেও দেখা দিয়েছে ক্রেতা সংকট। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কারখানা মালিকদের। কষ্টে দিনযাপন করছেন তাঁত শ্রমিকরাও।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী সোহাগপুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, থ্রি-পিছের পসরা নিয়ে বসেছেন শ্রমিক-ব্যবসায়ীরা। তবে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা না থাকায় অলস সময় পার করছেন তারা। কেউ কেউ হাট শেষ হওয়ার আগেই কাপড় নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার শ্রমিকদের মজুরির কথা চিন্তা করে ক্রেতা আশায় বসে আছেন।

জেলা তাঁত বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জের ৯ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। আর এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ জড়িত।

জামান টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী শামসুজ্জামান অপু বলেয়, আমার কারখানায় ১০৫টি পাওয়ারলুম তাঁত ছিল। রং, সুতা ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় লোকসান দিয়ে দিতে এখন ৪০টি তাঁত সচল রয়েছে। আজ সোহাগপুর হাটে গিয়েছিলাম ব্যাপারী নেই। এদিকে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কাপড় বিক্রি করে শ্রমিক মজুরি দেবো সে উপায়ও নেই। আর লোকসান দিয়ে বা কতদিন টিকে থাকবো।’

সোয়ান লুঙ্গির স্বত্বাধিকারী বাবু সরকার বলেন, এমনিতেই করোনা আর বন্যায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পের যে ক্ষতি হয়েছে তা কারখানা মালিকদের পুষিয়ে উঠতে আরও দুবছর সময় লাগবে। পুঁজি হারিয়ে ঋণের চাপে অনেক মালিক কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখন লোকসান দিয়ে বাপ-দাদার ব্যবসায় টিকিয়ে রেখেছি। তবে লোকসান দিয়ে কতদিন এ ব্যবসা টিকে রাখতে পারবো তা জানি না। হয়তো একটা সময় অন্য ব্যবসায় যেতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রং ও সুতাসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। একই সঙ্গে সরকারিভাবে তাঁত শিল্পকে তদারকি করতে হবে। তাহলেই এ শিল্প টিকে থাকবে।’

বাংলাদেশ পাওয়ালুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী বৈদ্যনাথ রায় বলেন, সিরাজগঞ্জে তাঁত কারখানা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণ হলো রং ও সুতাসহ বিভিন্ন কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। তাঁতিরা লোকসান গুনতে গুনতে একেবারে শেষ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, আবার এখন শুরু হয়েছে লোডশেডিং। এ কারণে দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা কারখানা বন্ধ থাকে। কমে গেছে কাপড় উৎপাদনও। একই সঙ্গে শ্রমিক ও কারখানা মালিক উভয়ের আয় কমে যাচ্ছে।

তিনি মনে করেন, সিরাজগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দরকার। একই সঙ্গে কাঁচামালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। আর স্বল্প সুদে ঋণ দিলে এ শিল্প টিকে থাকবে।