ঢাকা, রবিবার ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০শে মাঘ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় আখ চাষে আগ্রহ হারাছে কৃষক

এস, এম, রাসেল হাসান, কুষ্টিয়া | প্রকাশের সময় : রবিবার ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১২:৫৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার কৃষকরা আগ্রহ হারাচ্ছে আখ চাষে। সময়ের সাথে সাথে দ্রুতগতিতে কমছে আখ চাষ। এ বছর যে কয়েকজন আখ করেছেন তারাও হতাশ। আগামী বছর এ জেলায় আখ চাষি আরো কমার আশঙ্কা করছেন  সংশ্লিষ্টরা।  ২০২০ মাড়াই মৌসুমে কুষ্টিয়া সুগার মিলস বন্ধ হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে আখ চাষ হ্রাস পেয়েছে দ্রুত গতিতে। হাতে গোনা যে কয়েকজন কৃষক আখ চাষ করছেন তারা নিজেরা গুড় তৈরী করছেন নতুবা মাঠ থেকে বিক্রি করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীদের কাছে।

জানা গেছে প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় প্রায় ৫২ মেট্রিক টন। গুড় উৎপাদন হয় প্রায় ৪ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টর জমিতে আত উৎপাদন ও গুড় তৈরীতে খরচ হয় প্রায় ২ লক্ষ টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সূত্র হতে জানা যায়, কুষ্টিয়া অঞ্চলে এ বছর প্রায় ১১ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। ২০২০ সালে এই অঞ্চলে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। সে বছরই কুষ্টিয়া সুগার মিল বন্ধ হলে আখ চাষীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এ ফসল থেকে। এছাড়াও আজ দীর্ঘমেয়াদি ফসল হওয়া, অধিক পোকার আক্রমণ , কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি, মিলে আখ বিক্রি করে মূল্য পেতে দীর্ঘ সময়, সরকারিভাবে কোন ক্ষুদ্র ঋণ না থাকায় ধীরে ধীরে কমছে আখের চাষ।

আখ চাষীরা জানান, কুষ্টিয়া খোকসা, মিরপুর, দৌলতপুর উপজেলায় আখ চাষ অনান্য উপজেলার তুলনায় একটু বেশী হয়। আগে জেলা জুড়ে বিপুল পরিমান আখ চাষ হতো। সর্বশেষ ৫ বছর আগে উৎপাদিত আখ সুগার মিলে বিক্রি করেছিলো। মিল বন্ধ ঘোষনার পর থেকে জেলায় আখ চাষ ব্যপক হারে হ্রাস পায়। বর্তমানে যে আখ চাষ হচ্ছে তা দিয়ে কৃষক মাঠেই গুড় তৈরী করছে নতুবা রস তৈরী করে শহরে বিক্রি করছে। গতবছর এক কেজি আখের গুড় মাঠ থেকে ৭৫-৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে।  এ বছর ১০০-১১০ টাকা বিক্রি করেও লোকশানে কৃষক। আখ উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি ও চাঁদাবাজি তার মুল কারন। এ জন্য আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা হররা গ্রামের কিশোর মাহমুদ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাদের গ্রামে একজন কৃষকও এবছর আখ চাষ করেননি। গত বছর ৭-১০ জন কৃষক আখ চাষ করেছিল। গত ৫-৬ বছর আগে আখ চাষি ছিলো শ'খানেক। আখ চাষে ১২-১৫ মাস সময় লাগে, কীটনাশক মূল্য বৃদ্ধি, পোকার আক্রমণ ইত্যাদি কারণে কৃষক আখ চাষ বাদ দিয়ে একই জমিতে ধান ভুট্টা পেঁয়াজ সহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে বেশি লাভবান হচ্ছে। এক বছরে অন্তত তিন থেকে চারটা ফসল ঘরে তুলতে পাচ্ছে। মিরপুর উপজেলার কৃষক রানা মালিথা নামে একজন কৃষক জানান, কুষ্টিয়ার সুগার মিল কাছাকাছি হয় আগে প্রচুর আখ করেছি। মিল বন্ধ হওয়ার পর আমাদের গ্রামে চার পাঁচ জন কৃষক আখ চাষ করে, বাকি কৃষকগুলো তামাক, বেগুন, কলা, ধান ইত্যাদি চাষে চলে গিয়েছে।

সুগার মিল পুনরায় চালু করতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য কর্পোরেশন শর্তসাপেক্ষে অনুমতি নিতে পেরেছে। শর্ত অনুযায়ী জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ আক্সাস ও মিলে আখ সরবরাহ করার শর্তে মিল চালু করার অনুমতি পাই। সে মোতাবেক জেলার মানুষ আশার আলো দেখে তবে বাস্তবে চাষীদের মাঝে আখ চাষের কোন উৎসাহ নেই। আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে এসেছে বিপ্লবিক পরিবর্তন। দুই থোে আড়াই মাসে ফসল ঘরে তুলছে কৃষক। অনেক ফসলের দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা বাড়াই কৃষক মূল্য পাচ্ছে বেশি। সেই জায়গায় কৃষকরা দীর্ঘমেয়াদি ফসল আখ চাষ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে।

কুষ্টিয়া খামারবাড়ি সূত্রে জানা যায়, একসময় এ জেলায় ৮-১০  জাতের ব্যাপক আখ চাষ হতো। লক্ষ্যমাত্রা থেকে দ্বিগুণ তিন গুণ আখ চাষ করতো কৃষক। বর্তমানে কুষ্টিয়ার মাঠে লক্ষ্যমাত্রা তো দূরে থাক ন্যূনতম আখ চাষ করছে না কৃষক। কৃষকদের আখ চাষ করতে উৎসাহ প্রদান করলেও কৃষক তাতে সাড়া দিচ্ছে না। তবে কয়েকজন কৃষক গুড় তৈরি ও বাণিজ্যিকভাবে আখের রস বিক্রেতার কাছে বিক্রির উদ্দেশ্যে সামান্য কিছু আখ চাষ করছে।

কুষ্টিয়া সুগার মিল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানান,  কুষ্টিয়া সুগার মিল কর্মকর্তাদের আকাশচুম্বি দুর্নীতিতে চাষিরা নিয়মিত প্রতারিত হয়ে আসছে। যখন সুগার মিল পুরো দমের চলত তখন কৃষক কে চাষ থেকে আগ বিক্রি পর্যন্ত কয়েক ধাপে ঘুষ দেওয়া লাগতো। ঘুষ না দিলে আগ কাটার অনুমতি পাওয়া যেত না, ঘুষ না দিলে আখের ওজন কমে যেত, ঘুষ না দিলে আক উৎপাদনে কীটনাশক সার পাওয়া যেত না, ঘুষ না দিলে আখ বিক্রির টাকা পাওয়া যেত না। একজন কৃষক এত ধাপে ঘুষ দিয়ে মুনাফা তো দূরের কথা তার মূলধন-ই হারিয়ে যেতো। এক বছর ধরে আখ চাষ করে মূলধন না হারিয়ে অন্য কোন ফসল আবাদ করলে কৃষক লাভের মুখ দেখবে, এজন্য এ জেলা থেকে আখ চাষ হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ দুর্নীতি লুটপাট করে মিলের ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেখিয়ে মিলটি বন্ধ করে দিয়ে আখ চাষীদের কপালে শেষ পেরেক ঢুকে দিয়েছে। মিল পুনরায় চালু করে দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ করে আখ চাষীদের বিনা সুদে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে চাষীদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিকায়ন কৃষি নির্ভর আখ চাষ করতে দাবি জানান তিনি।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ