ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

চাষাভুষা-জেলে-কুলি-মজুরের নামে শাবিতে টং দোকান

রাহাত হাসান মিশকাত | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১০ মে ২০২২ ১২:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়
 
 
সকল শ্রেণীর মানুষের প্রচেষ্টায় আর অবদানে আজকের বাংলাদেশ। সেই সকল শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সম্মান জানিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) পুণঃস্থাপিত টং দোকানের ‘কামলার টং’, ‘রিকশাওয়ালার টং’, ‘জাইল্লার টং’ ও ‘কুলিমজুরের টং’ নামে নামকরণ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে এ নামগুলো যেন রথীন্দ্রনাথ রায়ের “চাষাদের, মুটেদের, মজুরের।/ গরিবের নিঃস্বের ফকিরের/ আমার এ দেশ সব মানুষের, সব মানুষের।” এই গানের কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়।

ঈদের ছুটি শেষে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরেছে। আর এতেই ক্যাম্পাসের টং দোকানগুলো তার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বসে আড্ডা দিচ্ছে, কেউ কেউ গান করছে আবার কেউ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। শিক্ষার্থীদের একজন বলছেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে সবাই যে যার মতো জনগণকে জিম্মি করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম কি শুধু তাদের কাছে বেড়েছে? সাধারণ মানুষের কাছে বাড়েনি। এভাবে সবাই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করলে মানুষ বাঁচবে কি করে?’ এমন প্রশ্ন রেখে ছেলেটি তার কথা শেষ করে।

শিক্ষার্থীদের আড্ডায় ওই শিক্ষার্থীর কথা শেষ হলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের কাছে টং দোকানের নামকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আড্ডায় থাকা পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে টং দোকানের নামকরণের পিছনে একটা ঘটনা আছে। ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে এক শিক্ষিকা মন্তব্য করে বলেছিলেন, 'আমরা কি চাষাভুষা যে আমাদের নিয়ে যা তা বলবে।' উনি কেন বলেছেন জানি না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, তাহলে কি চাষাভুষাদের নিয়ে যা তা বলা যায়?’ পাশে থাকা শিক্ষার্থী অর্ঘ্য বলেন, ‘চাষাভুষা আমাদের পূর্বপুরুষ। আমরা এখন তাদের নিচু মনে করলে আমাদের পূর্ব পুরুষেরাও তাহলে নিচু ছিলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাষাভুষা পেশা নিচু কিছু নয়। আজকে সকালে যে খাবারটা খেয়ে এখানে এসেছি, সেই অন্নের যোগানদাতা আমাদের চাষাভুষারা।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসে এক সময় বেশ কিছু টং দোকান ছিলো। পরবর্তীতে সমাবর্তন এবং করোনাকালে টং দোকানগুলো বন্ধ করে দিলেও আর সেগুলো পুণঃস্থাপন করা হয়নি। পরে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থারা একাডেমিক ভবন ‘বি’ এর পাশে চাষাভুষার টং নামে একটি টং দোকান স্থাপন করে এবং প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষার্থীরা।

টং বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং আধুনিক টং দোকানের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিক্ষা ভবন ‘ই’ এর সামনে টংগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু টং দোকান স্থাপনের প্রতিশ্রুতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, শ্রমজীবীরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা রাষ্ট্রীয় খরচে পড়াশোনা করি। সেই অর্থের মূল যোগানদাতা শ্রমজীবী মানুষেরা। তাই শ্রমজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এবং আমরা যেন তাদের পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা করতে শিখি এজন্য ‘কামলার টং’, ‘রিকশাওয়ালার টং’, ‘জাইল্লার টং’ ও ‘কুলিমজুরের টং’ নামে টংগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেছে এমন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ জানান কিছু শিক্ষকবৃন্দ। এ সময় এক নারী শিক্ষক তার মন্তব্যে চাষাভুষা শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘আমরা চাষাভুষা নই, যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে’। এই মন্তব্যে চাষাভুষা মানুষদের অসম্মান করা হয়েছে বলে দাবি করে শিক্ষার্থীরা।